ময়মনসিংহ জেলা ব্যুরো প্রধানঃ
ময়মনসিংহ শহর ও আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত অটোরিক্সা ছিনতাইকারী প্রতারক চক্র বিভিন্ন কৌশলে অটোরিক্সা চুরি/ছিনতাই করে আসছে।
গত ২৪/০৬/২০২২ তারিখ সকাল অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় রায়হান মিয়া (১৯), পিতা-শহিদ মিয়া, সাং-বিষ্ণপুর, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ জেলা-ময়মনসিংহ ভাড়া করা অটোরিক্সা নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়। দিন শেষে রাত গড়িয়ে গেলেও সে বাড়ীতে না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইলে ফোন দেয়।
কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার পরিবারের লোকজন তাকে আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুজে না পেয়ে গত ২৫/০৬/২০২২ তারিখে ঈশ^রগঞ্জ থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। যার নম্বর-৯৯৯, তাং-২৫/০৬/২০২২ খ্রিঃ। রায়হানের পরিবারের ধারণা অটোরিক্সা চোর চক্রের সদস্যরা হয়তো তার অটোরিক্সা চুরি/ছিনতাই করতে তাকে হত্যা করেছে। রায়হানের নিখোঁজের বিষয়টি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় “অটোসহ অটোরিক্সাচালক নিখোঁজ” শিরোনামে ফলাও করে প্রচারিত হয়।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা উক্ত জিডির বিষয়ে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার চৌকস টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি টিমের সহযোগীতায় গত ২৮/০৬/২০২২ তারিখ দিবাগত রাতে নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানা এলাকা হতে আত্মগোপনে থাকা রায়হান মিয়াকে উদ্ধার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান স্বীকার করে যে, সে নিজেই অটোরিক্সাটি কৌশলে চুরি করে মোঃ মতিউর রহমান @ মতি (৩৭), পিতা-মৃত ইউসুফ আলী, সাং-বিষ্ণপুর, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ , জেলা-ময়মনসিংহ’র মাধ্যমে ১৭,০০০/- টাকায় তারাইলে বিক্রি করেছে। মতি মিয়া উক্ত টাকা হতে ৩,০০০/- টাকা নিজের জন্য রেখে বাকী টাকা রায়হানকে দিয়ে দেয়। রায়হান উক্ত ১৪,০০০/- টাকার ১২,০০০/- টাকা দিয়ে একটি স্মার্টফোন ক্রয় করে বাকী টাকা নিয়ে নারায়নগঞ্জে চলে যায়। সেখানে গিয়ে সে একটি গোডাউনে লেবারের কাজ নেয়।
ধৃত আসামী রায়হান মিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার চৌকস দল অভিযান পরিচালনা করে পেশাদার অটোরিক্সা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সদস্য মোঃ মতিউর রহমান @ মতি মিয়া (৩৭), পিতা-মৃত ইউসুফ আলী, সাং-বিষ্ণপুর, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ , জেলা-ময়মনসিংহকে তার বাড়ী হতে গ্রেফতার করে। পিবিআই টিম ছায়া তদন্তকালে অটোরিক্সা ছিনতাই চক্রের পুরো সিন্ডিকেট কে সনাক্তের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় ধৃত আসামী মতি মিয়াকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে, উক্ত চোরাই অটোরিক্সাটি সে কিশোরগঞ্জ জেলার তারাইল থানাধীন কাজলা সাকিনের মোঃ রিপন মিয়া (২৮), পিতা-আবুল হাশেম এর নিকট বিক্রি করেছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার অভিযান পরিচালনাকারী টিম কিশোরগঞ্জ জেলার তারাইল এলাকা হতে চোরাই অটোরিক্সা ক্রয়-বিক্রয়কারী চক্রের অপর সদস্য মোঃ রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী রিপন মিয়াকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত চোরাই অটোরিক্সাটি কয়েকটি হাত ঘুরে শীঘ্রই পাশ^বর্তী নরসিংদী জেলার চোরাইমাল গ্রহীতা চক্রের নিকট হস্তান্তরের পরিকল্পনা ছিল। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই টিম উক্ত চোরাই অটোরিক্সাটি কিশোরগঞ্জ শহরের যশোদল এলাকা হতে উদ্ধার করে জব্দ করে।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ অটোরিক্সা চোর চক্রের সদস্য। তারা অভ্যাসগতভাবে কৌশলে অটোরিক্সা চুরি করে বিক্রয় করে থাকে। ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা চোরাই চক্র সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। পিবিআই উক্ত বিষয়ে তদন্ত করে অটোরিক্সা চোর বা ছিনতাইকারীসহ ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সকল সদস্যদের আইনের আওতায় এনে পুরো চক্রের মূলোৎপাটন করবে।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে চুরি যাওয়া অটোরিক্সার মালিক মোছাঃ রুনা আক্তার (৩০), স্বামী-মৃত জিয়াউর রহমান, সাং-দিঘালিয়া, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ, জেলা-ময়মনসিংহ’র অভিযোগের ভিত্তিতে ঈশ^রগঞ্জ থানার মামলা নং-২২, তাং-২৯/০৬/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৪০৭/৪১৩/৪১১/৪১৪/৩৪ দঃ বিঃ রুজু হয়।
মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত হওয়ায় গত ২৯/০৬/২০২২ তারিখ স্ব-উদ্যোগে অধিগ্রহণ করা হয় এবং মামালার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব মোঃ আবুল কাশেম, পিপিএম এর উপর অর্পণ করা হয়।