আজ শুভ বিজয়া দশমী। বাঙালি হিন্দুদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবের সমাপনী দিবস। আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটবে। দেবী দুর্গা অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। এ বিজয় অর্জিত হয় আদ্যাশক্তি মহামায়ার সক্রিয় ভূমিকায়।
অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুর বধের ভেতর দিয়ে দেবকুলকে রক্ষা করে দেবী দুর্গা নিশ্চিত করেছিলেন অন্যায় ও অশুভ শক্তির পরাজয়, ন্যায় ও শুভ শক্তির জয়। মানুষের মহত্ত্বকে প্রাণিত করে তিনি দূর করেন মানুষের মনের দৈন্য। নিশ্চিত করেন কল্যাণ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। দেবীর অবস্থানকালে পাঁচ দিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবীর বন্দনা করে। মেতে ওঠে উৎসব আনন্দে।
প্রতিবছর দেবী দুর্গা বিভিন্ন বাহনে চড়ে মর্ত্যে আসেন,যার প্রতিটির কোনো না কোনো অর্থ আছে। এবার দেবী এসেছেন গজে চড়ে। গজ বা হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে, দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন, তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ, সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। দশমী বুধবার হলে দেবীর আসা বা যাওয়া নৌকায়। ফল ‘শস্য বুদ্ধিস্তথাজলম’ অর্থাৎ প্রবল বন্যা ও খরা দেখা যায়। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া সূচিত হয়। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য-শ্যামলা।
অন্যায়, অশুভ ও অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়, শুভ ও সত্যের চূড়ান্ত বিজয় হোক—এই হলো সব সম্প্রদায়ের মানুষের, সব ধর্মের মূলকথা। মানুষের পরম লক্ষ্য আত্মিক শুচিতা অর্জন ও তা রক্ষা করে চলা। কিন্তু মানুষ সেই লক্ষ্যে সব সময় অবিচল থাকতে পারে না। কখনো কখনো মানুষ পথের দিশা হারায়। মানুষকে সেই পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আবির্ভূত হন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। চিরন্তন দিশারি তিনি—সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে দেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষে মানুষে সব বিভেদ ও সংকীর্ণতা চিরতরে দূর হয়ে যাক। শক্তিশালী হোক মিলন ও সম্প্রীতির ধারা। সত্য, ন্যায় ও শুভ শক্তির জয় হোক।অসুরকে বধ ও অশুভকে বিনাশ করে মানব মনে সঞ্চারিত হোক শুভ চেতনা-এটাই বিজয়া দশমীর প্রত্যাশা।