বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষনা
পটুয়াখালীর গলাচিপায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রান সামগ্রী বিতরন হ‌বিগ‌ঞ্জে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় হেলপার গ্রেপ্তার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সাতক্ষীরায় মাদকসহ চেয়ারম্যান পুত্র এবং ভারতীয় নাগরিক আটক মনপুরায় ইয়াবাসহ ৩৫ বছর বয়সী যুবক আটক, পুলিশের কাছে হস্তান্তর টঙ্গীর হাজীর মাজার বস্তিতে যৌথ অভিযান: বিপুল মাদক উদ্ধার,২৪ জন আটক হলেও অধরা মূল হোতারা বিএনপি চায় উৎসব মুখর নির্বাচনী পরিবেশে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হউক – আমিনুল হক মনপুরায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু: স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ, থানায় গ্রেফতার কালীগঞ্জে ১৬ টি ককটেল সহ বিএনপি কর্মী আটক সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দুই জলদস্যু আটক

আরএমপিতে পুলিশের মানবিক পুলিশ সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক

মারুফ আহমেদ 
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২
  • ২২৬ বার পঠিত

রাজশাহী জেলায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৫টি ক্যাটাগরিতে ১৬ গুনীজন ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ‘কীর্তিমান পদক’ প্রদান করা হয়েছে। তারমধ্যে একজন ছিলেন সেই মানবিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক।

রাজশাহী জেলায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মানবিক পুলিশ সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিককে‘কীর্তিমান পদক’ প্রদান করা হয়।

বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়’ অনেক পুরনো প্রবাদ হলেও বাস্তবতায় তা আজও সমান প্রযোজ্য। এটায় প্রমাণ কোরে দিলেন রাজশাহী মেট্রো পলিটন পুলিশের একজন মানবিক পুলিশ সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক। ঘটনাটি ২০২১ সালের ২ মার্চ, পুলিশের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাচ্ছিল একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। দ্রুত সেই খবর পৌঁছে যায় সামনের চেকপোস্টে থাকা সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক এর কাছে। পরের চেকপোস্টে পৌঁছামাত্রই দায়িত্বরত সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক হাত দিয়ে সেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু চালক ছুটছিলেন প্রাণপণে। সেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক এর সংকেত অমান্য করে হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যান প্রায় একশ’ গজ দূরে।

পরে সড়ক বিভাজকের বেড়ার ওপর সার্জেন্টকে আছড়ে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় চালক। রাস্তায় পড়ে থাকা সার্জেন্ট জ্ঞান হারান। কিন্তু তার দিকে ঘুরেও তাকায়নি চালক।

বড়ই অমানবিক এ গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু ২০২১ সালের ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল বেলা শুরু হয় গল্পের নতুন অধ্যায়। সকালে আবারও অটোরিকশা নিয়ে নগরীর রেলগেইট এলাকায় ফেরেন চালক মাসুদ রানা। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় তাকে আটকে দেন দায়িত্বরত সার্জেন্ট রাশেদুল। জব্দ করা হয় সঙ্গে থাকা অটোরিকশার কাগজপত্র। পরে মামলা লিখতে গিয়ে তার চক্ষু চড়কগাছ। নথির সঙ্গে অটোরিকশার নম্বরে মিল নেই। নম্বরপ্লেট থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে শেষের ডিজিট।

দুয়ে দুয়ে চার। এরপরই মিলে যায় পুরনো হিসাব। ধরা পড়ে যান চালক। কিন্তু তখনও অপরাধ স্বীকার করেননি চালক। এরপর অটোরিকশাটি নেওয়া হয় নগর পুলিশের ট্রাফিক শাখার দফতরে। সেখানে জেরার মুখে ঘটনার আদ্যপান্ত বলে ফেলেন চালক মাসুদ রানা।মাসুদ রানা জানিয়েছেন, তিনি চার ও ছয় বছর বয়সী দুই মেয়ের বাবা। বাবার মৃত্যুর পর বিধবা মাকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই সংসার চালাতে পারছিলেন না। এরপর ঋণের টাকায় কেনা অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন। সেদিনের ঘটনা স্বীকার করে তিনি জানান, তার অটোরিকশাটি সবুজ রঙের। কিন্তু রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী দুপুর ২টা পর্যন্ত লাল রঙের অটোরিকশা চলাচল করবে নগরীতে। গত ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল যাত্রী নিয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এসেছিলেন। আগের যাত্রীদের নামিয়ে আরও কয়েকজন যাত্রী নিয়ে যান নগরীর রেলগেইট এলাকায়। উদ্দেশ্য ছিল-সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে গোদাগাড়ী ফিরবেন।

তখন বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা। রেলগেইটে ঢুকতেই গাড়ি থামানোর সংকেট দেন একজন সার্জেন্ট। তিনি ভেবেছিলেন, গাড়ি আটকে দেবে। এতে তার সংসার চলবে না। কোনো কিছু না ভেবেই তিনি টান দিয়ে বাস টার্মিনালের দিকে এগিয়ে যান। সেখানে আরেক সার্জেন্ট তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকেও তিনি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর ফেলে দেন। ভয়ে তিনি সেদিন কোনোরকমে পালিয়ে যান। পরে কয়েকদিন বের হননি রাস্তায়। শেষে বাধ্য হয়ে নম্বর প্লেট থেকে শেষের সংখ্যাটি মুছে দিয়ে গাড়ি আবারও রাস্তায় নামান।

চালকের ভাষ্য, তিনি বড় ভুল করে ফেলেছেন। এ ভুলের ক্ষমা নেই। তবুও সার্জেন্ট তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি জীবনে আর এমন ভুল করবেন না। রাস্তায় তিনি আইন মেনেই চলাচল করবেন। মনের ক্ষত মুছে গেলেও সেই দিনের শরীরের ক্ষতচিহ্ন আজও মুছে যায়নি সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিকের। এখনও তিনি ঘটনায় আঘাত পাওয়া বাম হাতে শক্তি পান না। তিনি জানান, ধরা পড়ার পর তিনি গিয়ে ওই চালককে শনাক্ত করেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে তার পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানতে পারেন। পরে মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। ক্ষমা করে দেন চালককে।

 

তিনি বলেন, ওই চালক দুই শিশু সন্তানের বাবা। তার নিজের দুই সন্তান আছে। মামলা হলে তাকে কারাবাস করতে হতো। কিন্তু দুটি সন্তান, আর বিধবা মাকে নিয়ে তার স্ত্রী অনিশ্চতায় পড়তেন। তার পুরো পরিবার ভেসে যেত। বিষয়টি তাকে ভাবনায় ফেলে দেয়। শেষে মামলার সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে আসেন।

 

সার্জেন্ট সন্দীপ আরও বলেন, পুলিশ সবসময় আইনের প্রয়োগ করে। অপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি করে অন্যদের শিক্ষা দেয়। এ চালকের ক্ষেত্রেও এমনটি করা যেত। যদিও চালক মানবতা কিংবা সহানুভূতি দেখাননি। কিন্তু তাতেও তার আক্ষেপ নেই।

 

তারপর সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিকের মানবিকতাকে সম্মান জানিয়েছিলেন আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অনির্বাণ চাকমা। তিনি বলেন, দুপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তার মনে হয়েছে এটি নিছকই দুর্ঘটনা। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন চালক। পরে তাকে মুচলেকা নিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ চায়, অপরাধের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে।

 

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ ওই অটোরিকশাটির নম্বর নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার সেটি আটকা পড়ে। প্রথম দিকে চালক সেদিনের ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। পরে নিজেই আবার স্বীকার করে নেন।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০/০৫/২০২২ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির উদ্যোগে রাজশাহী জেলায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৫টি ক্যাটাগরিতে ১৬ গুনীজন ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ‘কীর্তিমান পদক’ প্রদান করা হয়েছে। তারমধ্যে একজন ছিলেন সেই মানবিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট সন্দীপ মল্লিক। এবিষয়ে জানতে চাইলে সে দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকার সাংবাদিকদের জানান, এতো কিছুর মধ্যে আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অনির্বাণ চাকমা স্যার আমার পাশে ছিলেন। স্যার অনেক ভালো একজন মানুষ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ দৈনিক মাতৃজগত    
Developed By Bangla Webs
banglawebs999991