মোঃ লুৎফর রহমান লিটন সিরাজগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধিঃ-সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এবারে সরকারী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১৫ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ (চাষ) হয়েছে ৷ কৃষকেরা মাঠের রোপা আমন ধানকে ঘিরে আশা স্বপ্ন নিয়ে দিন পার করছেন৷ এ ধানকে ঘিরে তারা করছেন নানা পরিকল্পনা৷ বেশীরভাগ মাঠের রোপা আমন ধান এখন কাইচ থোড় ও থোড়মুখী৷
উল্লাপাড়ায় এবারে স্বাভাবিকের চেয়ে কম মাত্রায় বর্ষা হয়েছে৷ বর্ষা তেমন না হওয়ায় বোনা আমন ধানের আবাদ হয়নি বলে জানা গেছে ৷ এদিকে এবারে সরকারী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ বলে জানা গেছে ৷ কৃষকেরা জমিতে সেচ মেশিনে পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরী ও এখন ধান জমিতে পানি দিচ্ছেন৷
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলায় এবারের মৌসুমে ৯ হাজার ১২৫ হেক্টর পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদের সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৷ সেখানে ১১ হআর ১৪০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে ৷ সরকারী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১৫ হেক্টর বেশী পরিমাণ জমিতে আবাদ হয়েছে ৷ এবারের মৌসুমে কৃষকেরা উপজেলার সলঙ্গা,হাটিকুমরুল ,রামকৃষ্ণপুর , বড়হর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে আগে রোপা আমন ধানের আবাদ শুরু করেছেন ৷ এরপর পূর্ণিমাগাঁতী , বাঙ্গালা , দুর্গানগর , পঞ্চক্রোশী , সদর উল্লাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে এ ধানের আবাদ শুরু করা হয় ৷ সব মাঠেই সেচ মেশিন চালিয়ে জমিতে পানি সেচ দিয়ে পাওয়ার টিলারে হালচাষ ও ধান চারা লাগানো হয়েছে ৷ বেশী হারে ফলন হয় এমন বিভিন্ন জাতের রোপা আমন ধানের চারা কৃষকেরা লাগিয়েছেন বলে জানান ৷ একাধিক সেচ মেশিন মালিকের বক্তব্য তারা নিজের জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ পানি দেওয়া আর স্ক্রীমভুক্ত কৃষকদের জমিতে ফসলের অংশ নেওয়ার চুক্তিতে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন ৷ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানান স্বাভাবিক বর্ষা হলে তাদের জমিতে পানি উঠতো৷ বর্ষার পানি নেমে যাওয়া কিংবা জমি থেকে পানি শুকানোর পর সরিষা ফসলের আবাদ করা হতো৷ এবারে সরিষা ফসল আবাদ করা হতো বিভিন্ন মাঠের এমন বহু জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে ৷ হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাটধারী এলাকার মাঠ জুড়ে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছেন কৃষকেরা ৷
কৃষক হমশের আলীসহ আরো ক’জন কৃষক জানান , বর্ষার শেষে এই সময়ে জমিতে সাধারণত রোপা আমন আবাদ করা হত। এ বছর বর্ষার পানি দ্রুত সময়ে চলে যাওয়ায় আমরা সেসব জমিতে রোপা আমন ধান চাষে খুব ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বছরের এই সময়ে বোনাস ফসল হিসেবে ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি।
এদিকে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন এলাকার মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সব মাঠেরই রোপা আমন ধান বেশ ভালো আছে৷ কোনো রোগ বালাই নেই ৷ কৃষকেরা আগেই রোগ বালাই প্রতিরোধী ঔষধ ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে ৷ বিভিন্ন মাঠে আগে লাগানো ধান এখন থোড়মুখী৷ এদিকে জমিতে সেচ মেশিন চালিয়ে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে ৷ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানান তারা মাঠের রোপা আমন ধান ফসলের ভালো হারে ফলনের আশা নিয়ে আছেন ৷ কোনো দুর্যোগে যেন ক্ষয় ক্ষতি না হয় এ কামনা করছেন৷ এ ধানকে ঘিরে তাদের নানা পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে ৷ কৃষকদের কথায় বছরের প্রধান আবাদের ইরি বোরো ধান ফসলের আবাদে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়৷ রোপা আমন ধান ফসল ভালো ভাবে ঘরে উঠলে সে খরচের টাকার যোগান হবে৷
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন কৃষি নির্ভর উল্লাপাড়া উপজেলায় বলতে গেলে সব ধরণের ফসলের আবাদ হয়৷ ইরি বোরো ধানের পর সবচেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ও সরিষা ফসলের আবাদ হয়ে থাকে৷ এবারে সরকারী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৷ তিনি জানান বর্ষার পানি মাঠগুলোয় বেশী দিন না থাকা ও কোনো কোনো মাঠে পানি না উঠায় কৃষকেরা জমি পতিত না রেখে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছেন ৷ সরকারের কৃষি প্রণোদনায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রোপা আমন ধান বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে ৷ কৃষকেরা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া ধান বীজে কিংবা নিজ বাড়ির ধানে করা রোপা আমন ধানের নিজস্ব বীজতলার চারা জমিতে লাগিয়েছেন ৷এছাড়া অনেক কৃষক বিভিন্ন হাট কিংবা সরাসরি বীজতলা থেকে চারা কিনে জমিতে লাগিয়েছেন ৷ তিনি আরো বলেন সব মাঠেই রোপা আমন ধান ফসল বেশ ভালো আছে৷ আশা করছেন ফলন ভালো হারে মিলবে৷ এছাড়া কিভাবে চাষিরা তাদের জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে তিনি জানান।