মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বাবু মফস্বল সম্পাদকঃ
“প্রচ্ছদ / গণমাধ্যম”সাংবাদিক জাতির বিবেক!
একজন সাংবাদিকের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা আবশ্যক?
ভাষাগত দক্ষতাঃ বাংলা ও ইংরেজি – দুই ভাষাতে ভালো দখল থাকা জরুরি।
অনুসন্ধানী মনোভাবঃ কোন কিছুর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহের মানসিকতা থাকতে হবে।
যোগাযোগের দক্ষতাঃ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগের অভ্যাস থাকা প্রয়োজন।
উপস্থাপনার জ্ঞানঃ পাঠক বা দর্শক-শ্রোতার কাছে খবর উপস্থাপন করার ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।
লেখালেখির দক্ষতাঃ বিভিন্ন ধরনের লেখালেখিতে অভ্যস্ত থাকা জরুরি এ পেশায়।
বিশ্লেষণী ক্ষমতাঃ কিছু ক্ষেত্রে শুধু তথ্য-উপাত্তের উপর নির্ভর না করে লেখায় বা সংবাদে যৌক্তিক চিন্তার প্রকাশ ঘটানো প্রয়োজন।
কারিগরি কিছু জ্ঞান থাকলে আপনি অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন। যেমন, ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটরের প্রাথমিক ব্যবহার শিখে রাখলে তা কাজে দেবে। এর বাইরে ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকলে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে আসবে।
আগে থেকে নিজের পছন্দের বিষয়ে ঠিকভাবে জানা উচিত। যেমন, ক্রীড়া সাংবাদিক হতে চাইলে খেলাধুলা বিষয়ক বই, ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইট থেকে আপডেট নেবার অভ্যাস থাকা কাজে দেবে।
একজন সাংবাদিক হিসেবে কপিরাইট বিষয়ক আইনের জ্ঞান থাকা আপনার জন্য জরুরি। সর্বশেষ যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সৃজনশীলতা। তাই নিজেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল করে তোলার চেষ্টা থাকা চাই।
সাংবাদিকদের তথ্য প্রদানকারীর সুরক্ষা বিষয়ক আইনঃ
সাংবাদিকদের তথ্য প্রদানকারীদের প্রেস কাউন্সিল আইন ১৯৭৪ ও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর আওতায় সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। জনগণকে আকর্ষণ করে বা তাদের উপর প্রভাব ফেলে, এমন বিষয়ে তাদের অবহিত রাখা সাংবাদিকের দায়িত্ব (প্রেস কাউন্সিল আইন ১৯৭৪, ১১ ধারা)। সাংবাদিককে প্রচুর তথ্য ও সংবাদ জানতে হয় এবং সেজন্য সংবাদসূত্র হিসেবে কিছু মানুষের উপর নির্ভর করতে হয়। প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪- এর ১৩ (২) ধারা অনুযায়ী সাংবাদিককে তার তথ্য সূত্র প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যদি তিনি তথ্য অধিকার আইনের অধীনে তথ্য প্রদানকারীর (হুইসেল ব্লোয়ারের) দায়মুক্তির বিষয়টি জানান তাহলে তার কাজ সহজতর হতে পারে। তথ্য অধিকার আইনের ৩১ ধারা অনুসারে আইনি বাধা নেই এমন তথ্য যদি কোন কর্মকর্তা সরল বিশ্বাসে প্রকাশ করে, সেজন্য অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না।
যেমনঃ ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় “মান খারাপ, ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো বন্ধ” শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি জেলার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ওই কর্মকর্তা ক্যাপসুলে ছত্রাক দেখতে পেয়েছেন। এখানে সাংবাদিক তার তথ্য সূত্র প্রকাশ না করে তথ্য প্রদানকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন।
তথ্য অধিকার আইনের অনেকটা সম্পূরক হিসেবে জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট “তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন ২০১১” প্রণীত হয়েছে। এ আইনের বলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরা জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন এবং তা প্রকাশের কারণে তথ্য প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ফৌজদারি, দেওয়ানি বা বিভাগীয় মামলা দায়ের করা যাবে না। তথ্য প্রকাশকারীর সম্মতি ব্যতীত তার পরিচয় প্রকাশ করা বা তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার মানসিক , আর্থিক বা সামাজিকভাবে ক্ষতিকারক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। অবশ্য এই আইনটির বাস্তব প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি, এমনকি এটি সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোনও প্রচারণা ও জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়নি।
মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বাবু
বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান
দৈনিক মাতৃজগত
মফস্বল সম্পাদকঃ