শারমিন আরা ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনি: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হ-ত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার
আক্তারুজ্জামান শাহীন !
এই হ-ত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও
চ-রমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমানকে,
কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে
বাংলাদেশে চলে আসে শাহীন,
পরে আমানসহ ছয় জন মিলে এমপি আজিমকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে,
পরে লা-শ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগের মাধ্যমে অ-জ্ঞাত স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়,
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ আলোচিত এই হ-ত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে,
ত-দন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব
তথ্য পাওয়া গেছে !!
সূত্র জানায়,
ইতোমধ্যে হ-ত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া
চ-রমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানসহ তিন জনকে আ-টক করা হয়েছে,
এই ঘটনায় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মা-মলা দায়ের করেছেন।
একইসঙ্গে কলকাতায় ও পৃথক একটি মা-মলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে,
কলকাতার পুলিশ লা-শের টুকরো বহনকারী এক প্রাইভেটকার চালককে আ-টক করেছে,
বুধবার সকালে এমপি আজিমের মৃ-ত্যুর খবর
নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামাল
সাংবাদিকদের বলেছেন,
এমপি আনার খু-নের ঘটনায় বাংলাদেশিরাই
জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি,
এটা পরিকল্পিত হ-ত্যাকাণ্ড,
ইতোমধ্যে তিন জনকে গ্রে-ফতার করা হয়েছে,
আরও কয়েকজনকে গ্রে-ফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে,
ঘটনাটি নিয়ে যৌথভাবে দুই দেশের পুলিশ
কাজ করছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার
হারুন অর রশিদ মিন্টো রোডের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন,
এটি একটি নিষ্ঠুর হ-ত্যাকাণ্ড,
এটি পারিবারিক, আর্থিক, নাকি এলাকার কোনও দু,র্বৃত্তকে দমন করার জন্য হয়েছে,
তা আমরা তদন্ত করে দেখছি,
বিষয়টি নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে
ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন,
একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশের কিছু
অপ-রাধী নৃ-শংসভাবে হ-ত্যা করেছে,
আমরা তাদের কয়েকজনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি।
বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
এমপি আনারকে মা-রার জন্য
যেভাবে পরিকল্পনা করা হয় !!!—–
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান,
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এমপি আনারকে
হত্যা-র পরিকল্পনা করে
আক্তারুজ্জামান শাহীন।
শাহীন ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার ভাই
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র।
গত ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহীন
চর-মপন্থি নেতা
আমান ও সিলিস্তা রহমান নামে
নিজের এক বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা যান।
সেখানে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা
নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা।
কলকাতায় আরও আগে থেকেই অবস্থান করছিল শাহীনের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ।
সেখানে বসে তারা
এমপি আনারকে হ-ত্যার পরিকল্পনা করে।
হ-ত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে
১০ মে দেশে চলে আসেন শাহীন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমান বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে কিলারকে নিয়ে যায় কলকাতায়।
ফয়সাল শাজী ও মোস্তাফিজ নামে দুই ভাড়াটে
খু-নি ১১ মে কলকাতায় গিয়ে আমানের সঙ্গে
যোগ দেয়।
যেভাবে হ–ত্যা—!!
আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান,
এমপি আনার যে ১২ মে কলকাতায় যাবেন তা
আগে থেকেই জানতো শাহীন।
সে তাকে হ-ত্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে
রাখতে বলে।
এমপি আনারকে হ-ত্যার জন্য তারা
একাধিক চাপাতিও সংগ্রহ করে রাখে।
গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে
কলকাতায় যান এমপি আনার।
প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে
এমপি আনারকে নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে
ডেকে নিয়ে যায় হ-ত্যাকারী,!!
বিকালের দিকে এমপি আনার
সঞ্জিভা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন।
এরপর আমান তার সহযোগী ফয়সাল,
মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ মিলে এমপিকে
চা-পাতির মুখে জিম্মি করে।
এসময় তারা এমপির কাছে
শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও বলে। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বা-লিশ চাপা দিয়ে হ-ত্যা করে।
হ-ত্যার পর আমান বিষয়টি জানায় শাহীনকে।
লা-শ গু-ম করতে করা হয় অসংখ্য টুকরো,
আমানের দেওয়া তথ্যের বরাতে
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান,
শাহীনের পরামর্শ মতো লা-শ গু-ম করতে
এমপি আনারকে কে-টে টুকরো টুকরো করা হয়।
এরপর ফ্ল্যাটের কাছেই শপিং মল থেকে আনা
হয় দুটো বড় ট্রলিব্যাগ ও পলিথিন।
এমপি আনারের ম-রদেহের টুকরোগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে ট্রলিব্যাগে ভরা হয়।
ঘটনার রাতে লা-শের টুকরোসহ দুটি ট্রলিব্যাগ বাসাতেই রাখা হয়।
এর মধ্যে তারা বাইরে থেকে ব্লিচিং পাউডার এনে
ঘরের র-ক্তের দাগ পরিষ্কার করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,
কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের
সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া,
এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়।
এছাড়া সিলিস্তা রহমান নামে শাহীনের বান্ধবীর
বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে
আসার দৃ-শ্যও সিসিটিভি ফুটেজে আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমানের স্বীকারোক্তি ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হ-ত্যাকাণ্ডের পরদিন বিকালে একটি
ট্রলিব্যাগ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় আমান।
সে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে,
বাসা থেকে বের হয়ে পাশের একটি শপিং মলের সামনে সেই ট্রলিব্যাগটি সিয়ামের হাতে তুলে দেয়। সিয়াম সেই ব্যাগ নিয়ে
তাদের আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা গাড়ি নিয়ে অ-জ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যায়।
তবে সেই গাড়িচালক কলকাতা পুলিশকে
জানিয়েছে,
সিয়াম কিছু দূর যাওয়ার পর ব্যাগটি নিয়ে
গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
আমান জানায়,
লা-শের টুকরোসহ আরেকটি ব্যাগ বাসাতেই ছিল।
সেই ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধও ছড়ানো শুরু করেছিল।