রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মানহানির মামলায় হাজিরা দিতে আসা যমুনা টেলিভিশনের গাইবান্ধা করেসপনডেন্ট জিল্লুর রহমান পলাশ ও জেলার ৫ সাংবাদিককে গালিগালাজ এবং দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে মামলার বাদি সুন্দরগঞ্জের সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরন্নবী সরকার। আজ ২ আগষ্ট মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের ক্যান্টিনের সামনের বারান্দায় এই হুমকি দেন তিনি। এসময় জিল্লুর রহমান পলাশের সঙ্গে ছিলেন, কালের কন্ঠের সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ মামুন-উর রশিদ, ভোরের দর্পণের প্রতিনিধি শামসুল হক, দৈনিক জনসংকেতের প্রতিনিধি আবু জাহিদ কারী এবং মানবাধিকারকর্মী মাহাবুবার রহমান। আদালত এলাকায় মামলার বাদী কর্তৃক সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গাইবান্ধা জেলার সর্বস্তরের গণমাধ্যমকর্মীগণ তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা পলাশসহ পাঁচ সাংবাদিকের পক্ষের আইনজীবি মোঃ ফরহাদ হোসেন জানান, আদালত ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় রংপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পুর্ব নির্ধারিত তারিখে সোমবার পিআইও’র করা মানহানীর মামলায় চার্জ গঠন শুনানির দিন ধার্য্য ছিলো। এই মামলায় হাজিরা দিতে আসেন সাংবাদিকরা। বিচারক না থাকায় মামলার পরের তারিখ ধার্য্য হয় আগামি ৩১ অক্টোবর। পরে সাংবাদিকরা ভবনের নীচে নেমে ক্যান্টিনের সামনে আসলে সেখান থাকা বাদি পিআইও নুরুন্নবী সরকার সাংবাদিক পলাশসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যান্যদের অকথ্য ভাষায গালিগালাজ শুরু করেন।এক পর্যায়ে তিনি মারমুখি হন পলাশের ওপর। হাত ও আঙ্গুল উচিয়ে পলাশকে বলেন, তোকে দেখে নিবো, তোকে এবার মজা দেখাবো। আমাকে মিথ্যা নিউজ করে হয়রানি করেছিস। পরে সেখানে উপস্থিত আইনজীবিসহ কোর্ট পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়। এ ঘটনায় পলাশসহ সাংবাদিকরা মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন। আইনজীবী ফরহাদ হোসেন আরো জানান, একজন সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আদালতকে সম্মান রেখে হাজিরা দিতে আসা সাংবাদিকদের যেভাবে গালিগালাজ এবং দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে এটি শিষ্টাচার বিরোধী এবং ফৌজদারী আইনে অপরাধ। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু জিডি করা হয়েছে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।
মামলার আইনজীবী ফরহাদ হোসেন এও বলেন, যে সরকারি কর্মকর্তা কোর্টের বারান্দায় আসামিদের এভাবে গালিগালাজ ও হুমকি দিতে পারে,বাদীর দ্বারা বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের। তার এবং তার লোকজনের দ্বারা যেকোন সময় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘটনাটি উদ্বেগ জনক এবং এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনাও করেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান পলাশ জানান, আমি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন করেছি। তিনি আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। আদালতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমিসহ অন্যান্যরা তারিখে তারিখে হাজিরা দিচ্ছি। কিন্তু বাদী পিআইও নুরুন্নবী যেভাবে আদালতের বারান্দায় আমাকেসহ অন্যান্যদের উপর হামলে পড়লেন এবং গালিগালাজ করে হুমকি দিলেন তাতে আমরা উদ্বিগ্ন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
উল্লেখ্য, গত ২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেন পিআইও নুরুন্নবী সরকার। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যমুনা টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। পরে মানহানীর অভিযোগে ২০১৯ সালে রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি পৃথক মামলা করেন পিআইও নুরুন্নবী। ঘুষ-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত করে নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্যে সিন্ডিকেট ও অসদাচরণের প্রমাণ পায় স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। পরে তার বিরুদ্ধে দুটি বিভাগীয় মামলা করে লঘুদণ্ড হিসেবে বার্ষিক বর্ধিত বেতন স্থগিতসহ স্থায়ীভাবে বেতন গ্রেড (নিম্নতর) পদাবনতির আদেশ দেয় অধিদপ্তর। এছাড়া কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।