গাইবান্ধা জেলা ব্যুরো প্রধান/রানা ইস্কান্দার রহমান:
হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা বুধবার জেলার সাতটি উপজেলায় ৬ শত ৮ টি পূঁজা মন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন জলাশয়ে দেবতা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দূর্গা পূঁজা ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার সাতটি উপজেলা,৪ টি পৌরসভাসহ মোট ৬ শত ৮টি পূঁজা মন্ডপে স্থাপন করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পূঁজা মন্ডপ আশেপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, এই বছর দেবী দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে ৫ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার শেষ দিনে দশমীতে তার স্বামীর আবাসস্থল কৈলাসে তার প্রত্যাবর্তন যাত্রা করেছিলেন। এর আগে, দেবী দুর্গা স্বর্গ থেকে নশ্বর জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাঁর আগমন সমস্ত সুখ এবং সমৃদ্ধির কারণ এবং অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক। দশমীর দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা একে অপরের সাথে শুভ বিজয়া বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে, শত শত হিন্দু ভক্ত দেবতাকে অশ্রুসিক্ত বিদায় দেন, যাকে বলা হয় ‘বিসর্জন’।বিসর্জনের জন্য বেদি থেকে মা দুর্গা এবং অন্যান্য দেব-দেবীর মূর্তি অপসারণ করার আগে, হিন্দু ভক্তরা বয়স নির্বিশেষে তাদের গভীর আবেগপূর্ণ অন্তরজামি প্রকাশ করে কীর্তন গেয়ে থাকেন। তারা দেবী দূর্গাকে ধূপের ঘোটা থেকে ধোঁয়া দিয়ে দূর্গা ও দেবদেবী গণের আর্শিবাদ পেতে আরতি নিবেদন করে নিজেদের গোত্রের সবার জন্য তার ঐশ্বরিক আশীর্বাদ কামনা করেন। এরপর বিকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত রীতিনীতি অনুযায়ী জেলার সব পূজা মণ্ডপ থেকে দুর্গার প্রতিমা বের করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত সঙ্গীত ও নৃত্য সহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় যোগ দেয় এবং নানা রঙ্গে নৃত্য করে প্রতিমাগুলিকে ট্রাকে,ট্রাক্টরে বা কাঁধে করে নিকটবর্তী নদী, ছোট বড় পুকুর, খাল এবং অন্যান্য জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়।বির্সজন দেওয়ার পর পূঁজারীগণ শান্তির জল নিয়ে ফেরেন সকলের মঙ্গল কামনায়।
জেলা জুড়ে পুঁজা শুরুর কল্পে প্রতিমা তৈরী,পুঁজা উদযাপন ও বিসর্জনের সময় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশনায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পরিচালনায় জেলা সদর সহ অন্যান্য উপজেলা, পৌর এলাকায় আনসার, পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরোপুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেন।
জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি,জাতীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এমপি, উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি পূজার সময় পৃথকভাবে জেলার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং পূজা মন্ডপ কমিটির ও ভক্তদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়কে যথাযথভাবে উৎসব উদযাপন করতে সাহায্য করার জন্য সরকার জেলার ৬ শত ৮ টি পূঁজা মণ্ডপে ৩ শত ৪ টন চাল বরাদ্দ করা হয়। যা প্রতিটি মন্ডবে ৫ শত কেজি করে প্রদান করা হয়েছে।
দুর্গা উৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা, পূজা, অর্চনা, কীর্তন, আরতি এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে সক্ষম করার জন্য রাতে পূজা মণ্ডপগুলিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। সংযোগ ত্রুটি সমস্যা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ছিলো।
একযোগে সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধা জেলা জুড়ে চলা দুর্গা পুঁজা মন্ডব গুলো পৃথক পৃথক ভাবে পরিদর্শন ও হিন্দুধর্মালম্বীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাবিরুল ইসলাম,বাংলাদেশ পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আব্দুল আলীম মাহমুদ বিপিএম, জেলার অলিউর রহমান, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিপিএম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণ, পৌর মেয়রগণ,উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, থানার ওসিগণ, জেলার পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং উৎসব উপলক্ষে ভক্ত ও পূজা মণ্ডপ কমিটির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ জেলা জুড়ে পূঁজা মন্ডব গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।