শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষনা
হিরো উমেন স্কলারশীপ বিতরণ র‌্যাব -৫ এর অভিযানে কষ্টি পাথরে বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার ঝিনাইদহে ভর্তুকি মুল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি শুরু কটন কারখানা পরিদর্শন করলেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৫, ময়মনসিংহ ইউনিটের পুলিশ সুপার ঝিনাইদহে হারানো ও চুরি হওয়া ১০৫ টি মোবাইল, প্রতারণা করে নেওয়া প্রায় ৭ লাখ টাকা উদ্ধার সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রীর গাডি বহরে হামলা মামলার আসামি যশোরে আটক বিএনপি সত্যি ভারতীয় পণ্য বর্জন করছে কিনা, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শ্রীপুরে মসজিদের ইমাম ও এতিম অসহায়দের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশ, খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকার ;ঈদ উপহার বিতরণে নিখিল চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন

গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলায় পান চাষে সফল কৃষক আব্দুল জলিল।

রানা ইস্কান্দার রহমান
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২
  • ১১৫ বার পঠিত

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার পানের গ্রাম নামে খেতো কালুগাড়ী গ্রামের মৃত,মোহাম্মদ আলির ছেলে সফল পান চাষী আব্দুল জলিল সরকার পান চাষ করে উক্ত গ্রামে একজন সফল আদর্শ পানচাষীর ক্ষেতি অর্জন করেছেন। তিনি প্রায় ৪০ বছর থেকে পান চাষ করে আসছেন। সফল পান চাষী আব্দুল জলিল সরকার তিন মেয়েকে ভালো ঘরে বিবাহ দিয়েছেন, ১৪ লাখ টাকায় করেছেন বিল্ডিং বাড়ী,ক্রয় করেছেন দেড় একর জমি।

 

 

পান একটি অর্থকারি ফসল। দেশে-বিদেশে রয়েছে এর ব‍্যাপক চাহিদা। এতে অনেক ঔষধি গুন রয়েছে। রোগবালাই পান উৎপাদনের জন্য বড় বাঁধা। পানে গোড়া পচা,ঢলে পড়া,পাতা পচা, অ‍্যানথ্রাকনোজ,সাদাগুড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই ফসল অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

 

বতর্মান সময়ে বাজারে পানের ভালো দাম পাওয়ায় কালুগাড়ী গ্রামসহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকার কৃষক পান চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তারা অন‍্যান‍্য ফসল বাদ দিয়ে পান চাষ বেছে নিয়েছেন। পান ১২ মাসি লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকেরা এর চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।

 

পানচাষী আব্দুল জলিল সরকার জানান, আমার বাপ-দাদার পূর্ব পুরুষ থেকে পানের বরজ রয়েছে। একজনার দেখাদেখি অন‍্যজন পান চাষ করতে করতে আজ আমাদের কালুগাড়ী গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে একটি দুইটি করে পানের বরজ রয়েছে। একারণে মানুষ এ গ্রামটির নাম দিয়েছে পানের গ্রাম। আজ থেকে ৪০ বছর আগে আমি আমার বাবার পাওয়া ৮ আনা বরজ দিয়ে শুরু করে এখন ৩২ আনা বরজে পান চাষ করেছি।যেহেতু পান চাষে তিন মাস পরপর হিসেব হয়। সেই হিসেবে আমার তিন মাস পরপর এখন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ বাদে আয় হয়। আমার প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ টি শ্রমিক নিয়মিত পানের বরজে কাজ করে থাকেন। সপ্তাহে ৫ দিনই পান বিক্রি করতে হয়।

 

পান চাষের ইতিহাস সূত্রে জানাযায়,এক সময় শুধু বারুই সম্প্রদায়ের লোকেরা পান চাষ ও ব‍্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বতর্মানে অন‍্য সম্প্রদায়ের কৃষক পানচাষে বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সারাদেশের তূলনায় পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি,আচার-আচরণ,বিবাহ-সাদীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পানের ব‍্যবহার চলে আসছে। প্রাচীন অভিজাত জনগোষ্ঠীর মাঝে পান তৈরী এবং তা সুন্দরভাবে পান দানিতে সাজানো লোকজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি ছিলো।

 

একই গ্রামের পান চাষী ফজলার রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম জানান, আমি দেড় বিঘা জমিতে পান চাষ করেছি।পান চাষের জন‍্য যেমন বিশেষ ধরনের জমির প্রয়োজন তেমনি প্রচুর যত্নেরও দরকার হয়। পানচাষের জন‍্য নির্বাচিত জমি সাধারণত একটু উঁচু,মাটির ধরণ শক্ত এবং জলাশয় ও পুকুরের ধারে ইত্যাদি স্থানে হলে ভালো হয়। পানের বাগানকে বলা হয় পানের বরজ। একটি বরজের আয়তন সাধারণত ১২ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকলেও বতর্মানে অনেক বেশি জমিতে পান চাষ হচ্ছে।

আদর্শ পানচাষী আব্দুল জলিল সরকারের ভাতিজা মাহাবুর জানান,আমিও ১২ আনা জমিতে পান চাষ করেছি। পানের ফলনও হয়েছে আশানুরুপ। বাজারে দামও পাচ্ছি ভালো। এক বিরা খিলি পান বাজারে ১০০ থেকে আকার ভেদে ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি। বরজে শরিষার খৈল ও গোবরকে সার হিসেবে ব‍্যবহার করা হয়। পাশাপাশি বতর্মানে প্রচলিত জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সারও ব‍্যবহার করা হয়। মে ও জুন মাসে পান রোপনের সঠিক সময়। পান রোপণ করতে হয়,মাঝখানে দুইফুট দূরত্বে রেখে চারাগুলি সমান্তরাল লাইনে রোপন করে,বাঁশের শলা বা খুঁটি পুঁতে তার সাথে পানের লতাগুলি জড়িয়ে দেয়া হয়। গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বরজের চারদিকে ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচু করে বাঁশের শলা ও খুটি দিয়ে বড়ো এবং একই সামগ্রী দিয়ে উপরে মাচান তৈরী করা হয়। শুকনা মৌসুমে পান গাছে নিয়মিত পানি সেচের ব‍্যবস্থা করতে হয়। চারা রোপনের এক বছর পর পান আহরণের উপযোগী হয় এবং বরজ তৈরির পর কয়েক বছর পযর্ন্ত তা থেকে উৎপাদন অব‍্যাহত থাকে।

হোসেনপুর ইউনিয়নের ঝাঁপড় গ্রামের পানচাষী লিখন জানান, সাধারণত বছরে পানের তিনটি ফলন হয়। কার্তিক,ফাগুন ও আষাঢ় মাসে পান আহরণ করা যায়। বলা হয়ে থাকে কার্তিকের পান আষাঢ়ের পানের চেয়ে সুস্বাদু। পান গাছে কমপক্ষে ১৬ পান রেখে বাকি পান পাতা আহরণের নিয়ম। পাতারপানের চেয়ে সুস্বাদু। পান গাছে কমপক্ষে ১৬ পান রেখে বাকি পান পাতা আহরণের নিয়ম। পাতার আকার, কোমলতা,ঝাঁজ,সুগন্ধ ইত্যাদির বিচারে বহু ধরনের পান রয়েছে। যেমন,মিষ্টি পান,সাঁচি পান প্রভৃতি। পান সাধারণত ২০ গোন্ডায় এক পন ধরা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, পানের কান্ড পচা/ গোড়া পচা এক প্রকার ছত্রাক। এ ছত্রাক প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন‍্যান‍্য শস‍্য আক্রমন করে। যেকোনো বয়সের পান গাছে এ রোগ হতে পারে। গ্রীষ্মকালে মাটির ওপর শায়িত লতায় এ রোগ হয়। পান গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে। এতে লতার পাতা হলুদ হয়ে যায় ও ঝড়ে পড়ে। রোগাক্রান্ত লতা-পাতা বরজ থেকে তুলে পুঁড়ে ফেলতে হবে। এরপর ট্রাইকোডার্মা কম্পোষ্ট সার প্রতি গাছে ৫ গ্রাম জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।আমরা পান চাষে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন রোগ বালাইনাশকের বিষয়ে পরামর্শ অব‍্যাহত রেখেছি।

উল্লেখ্য, পলাশবাড়ী উপজেলায় পান চাষ বৃদ্ধির কারণে,প্রতিদিন পৌরসভার ছোট শিমুলিয়া পানের হাট থেকে ট্রাকে ট্রাকে পান দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে অন্যান্য ফসল বিক্রয়ের হাট দিনের বেলায় হলেও পান বিক্রির হাট বসে খুব ভোরে। আবার ১০/১১ টার মধ্যেই পান কেনা-বেচা শেষ হয়ে যায়।

 

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991