গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নয়টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জেব্রাগুলো মারা যায়। নয়টি জেব্রার মৃত্যুর কারণ জানতে মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞদল। সাফারী পার্কে বৈঠকে বসেছেন
২৫ জানুয়ারি সকালে জেব্রার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মোঃ জাহিদুল কবির। তবে ২ জানুয়ারি থেকে পার্কে জেব্রার মৃত্যু হলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রেখেছিল। সবশেষ সোমবার রাতে পার্কে জেব্রার মৃত্যু
বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরিচালক জাহিদুল কবির জানান, খাদ্যে
বিষক্রিয়া, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণসহ নানা কারণে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হতে পারে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার পার্কে বৈঠকে বসেছেন বিশেষজ্ঞদল ।
তিনি জানান, জেব্রা দলবেঁধে চলে। মৃত্যুর আগ থেকে এদের মৃত্যুর কারণ বা কোন রোগের উপসর্গ দেখা যায় না। প্রাণীগুলো বন্য এদের কাছে যাওয়া যায় না। হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে পড়ে যায়, সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং পেট ফুলে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়। করোনা সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টগুলো নেগেটিভ এসেছে। এছাড়াও খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে এমন সন্দেহে খাবারগুলোও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস, লিভার, মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবারগুলোর পরীক্ষা করা হয়েছে, যার রিপোর্ট চলে এসেছে। তবে জেব্রাগুলো যে খাবার খাচ্ছে তা পার্কে থাকা অন্যান্য
প্রাণীগুলোও খাচ্ছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলে অন্যান্য
প্রাণীগুলোরও মৃত্যু হতে পারতো। তিনি আরও বলেন, মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই মাদী জেব্রা অর্থাৎ ৯০ভাগই মাদী জেব্রা । মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই পার্কে জন্ম নেয়া । মঙ্গলবার ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারী অনুষদের তিনজন বিশেষজ্ঞ, ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর মোঃ শহিদুল্ল্যাহ্ ও গাজীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ দলের একটি বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পার্কের নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। বাইরে থেকে কেউ এসে বিষ প্রয়োগের সুযোগও নেই। সকল বিষয় মাথায় চলছে। রেখেই তবে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে মৃত্যুর কারণ। তদন্ত পরীক্ষার
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বনসংরক্ষক মোঃ তবিবুর রহমান জানান, গত ২ জানুয়ারি থেকে পার্কের আফ্রিকান কোর সাফারীর জেব্রা বেষ্টনীতে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে জেব্রার মৃত দেহের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সোমবার রাতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পরীক্ষার ফলাফলও পেয়েছেন তাঁরা। ওই ফলাফল হাতে নিয়েই মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় সাফারী পার্কে বিশেষজ্ঞদল বৈঠকে বসেছেন।