মোঃ রতন সরকার স্টাফ রিপোর্টারঃ সড়কের বড় বড় গর্তে পানি জমে যানবাহন চলাচলে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মন্নুগেট এলাকায়
সড়কের বড় বড় গর্তে পানি জমে যানবাহন চলাচলে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি ।
সড়কের পিচঢালাই উঠে আগেই তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাতের টানা বৃষ্টিতে সেসব গর্তে জমেছে হাঁটুপানি। ওপর থেকে দেখে সে গর্ত বোঝার উপায় নেই। শঙ্কা নিয়ে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, কখনো হেলেদুলে। মাঝেমধ্যে গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি, পেছনে দেখা দিচ্ছে যানজট।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঘুরে এই চিত্র দেখা গেল। এই সড়কে ১১ বছর ধরে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রতিবছর বর্ষায় সড়কটিতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি।
স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পের কাজের ধীরগতি বা ঢিলেমির কারণে সড়কটি এখন লাখো মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে সড়কের যত্রতত্র খুঁড়ে রাখা হয়েছে। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে ইট, বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। শীত কিংবা বর্ষা—সব সময় সড়কটিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষকে। এর মধ্যে একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলে দেখা দেয় চরম ভোগান্তি।
বিআরটি প্রকল্পের মতো ভোগান্তি বাংলাদেশে আর কোথাও হয়নি: ওবায়দুল কাদের
রাজধানীর উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন গাজীপুরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা মো. মেহেদি হাসান। প্রতিদিন এই সড়ক ধরেই মোটরসাইকেলে আসা–যাওয়া তাঁর। গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ভোগান্তির কথা ভেবে অন্তত ১০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে বাসায় ফিরেছেন উল্লেখ করে মেহেদি বলছিলেন, ‘মনে মনে সব সময় বলতে থাকি যেন বৃষ্টি না হয়। কারণ, বৃষ্টি হলেই সড়ক দিয়ে চলার উপায় থাকে না। অফিসে যাওয়ার চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে যায়।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নালা বন্ধ, জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি
রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। দেখা যায়, টঙ্গী বেইলি সেতু থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। বিশেষ করে, টঙ্গীবাজার, বাটাগেট, স্টেশনরোড, কামারপাড়া সড়কের মাথা, মন্নুগেট, মিলগেট ও চেরাগ আলী এলাকায় সড়কের উভয় দিকে তৈরি হয়েছে বড় বড় সব গর্ত। বৃষ্টির পানিতে সেসব গর্ত ঠিকঠাক ঠাওরও করা যায় না। এর মধ্যে মন্নুগেট এলাকায় অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গর্তের কারণে কোনো যানবাহনই ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।
সড়কে বৃষ্টির পানি জমে বেড়েছে ভোগান্তি।-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চেরাগ আলী
চেরাগ আলীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে চলছে উড়ালসড়কের দুটি র্যাম্প নির্মাণের কাজ। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়কটি। তার ওপর এখানে বড় বড় গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। বিশেষ করে, সড়কের পশ্চিম পাশে নালার পানি উপচে তৈরি হয়েছে খালের মতো অবস্থা। প্রায় সব যানবাহনকেই এখানে এসে গতি কমাতে হচ্ছে। এতে থেমে থেমে দেখা দিচ্ছে যানজট।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এখানে প্রকল্পের ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিককে কাজের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। তাঁদের একজন বলেন, এখানে সড়কের পানিনিষ্কাশনের কোনো নালা নেই। তাই বৃষ্টি হলেই পানি জমে একাকার হয়ে যায়। বৃষ্টি হলেই তাঁরা এখানে পানিনিষ্কাশনের কাজ করেন। সেচে পানি সরান। গতকাল রাতের বৃষ্টিতে সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ হয়েছে, তাই সকাল সকালই তাঁদের পাঠানো হয়েছে কাজে।
বিআরটি প্রকল্পের গাফিলতিতে দুর্ভোগ চরমে, আজও গাড়ি চলছে থেমে থেমে
সড়কটির মন্নুগেট এলাকায় কথা হয় কিশোরগঞ্জগামী জলসিঁড়ি পরিবহনের চালক মো. ইব্রাহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গর্ত ও বৃষ্টির পানির কারণে প্রায়ই গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। গন্তব্যে যেতে সময় বেশি লাগে। যাত্রীরাও পড়েন ভোগান্তিতে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মন্নুগেট এলাকায় প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করে দেখা যায়, ছুটির দিন সকাল হওয়ায় সড়কে যানবাহন কিছুটা কম। এর মাঝে যেসব যানবাহন চলছে, তার অধিকাংশ যানবাহনকে এখানে এসে গতি কমাতে হচ্ছে। গর্তে পড়ার ভয়ে কোনো কোনো যানবাহন চলছিল একেবারে সড়কের পাশ ঘেঁষে। মাঝেমধ্যেই দেখা দিচ্ছিল যানজট।
সড়কের গর্ত-খানাখন্দ নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, চেরাগ আলী এলাকায় উড়ালসড়কের র্যাম্প নির্মাণ চলছে। মালামাল আনা-নেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সড়কে স্থায়ী ঢালাই দেওয়া যাচ্ছে না। কোনো গর্ত তৈরি হলে তাঁরা মেরামত করে দিচ্ছেন। স্থায়ী ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হলে এই সমস্যা থাকবে না বলে দাবি তাঁর।