মোঃ বানী ইসরাইল হিটলার স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজশাহী জেলায় গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী ক্ষেতুরীগ্রামে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়িতে বৈষ্ণব ধর্মের শিরোমণী, প্রেমভক্তি মহারাজ ও অহিংসার প্রতীক ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) অধিবাসের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব শুরু হয়। আজ শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) অরুণোদয় থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারক গ্র²নাম সংকীর্ত্তন, শনিবার (১৫ অক্টোবর) প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব।
প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দিরে নেমেছে লক্ষ ভক্তদের ঢল। ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসবকে ঘিরে ক্ষেতুরীধাম এলাকায় বসে ক্ষেতুরীমেলা।
করোনার কারনে গত দুই বছর এ অনুষ্ঠানে ভক্তরা আসতে না পারায় দুই বছর বসেনি ক্ষেতুরীমেলা। এবার লাখ ভক্তে সমাগম হয়েছে, বসেছে ক্ষেতুরীমেলা। মহোৎসব শুরু দুদিন আগ থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসতে শুরু করেছে। গোরাঙ্গবাড়ীর নির্ধারিত জায়গায় ছাড়াও রাস্তার দুপাশে ক্ষেতুরীমেলাকে ঘিরে বিভিন্ন পসরার দোকান সাজিয়ে জমে উঠেছে খেতুরীমেলা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়ি ছাড়াও ভক্তরা তমালতলী, ভোজনতলী, খিলতলী ও আমতলী গিয়ে মহাপ্রভু ঠাকুর নরোত্তম দাসের আরাধনা করেন।
ভক্তদের মতে, বৈষ্ণব ধর্মের শিরোমণী, প্রেমভক্তি মহারাজ ও অহিংসার প্রতীক ঠাকুর নরোত্তম দাস। প্রথম দিন সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিনদিনের অনুষ্ঠানমালা। আগামী শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) অরুণোদয় থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারক গ্র²নাম সংকীর্ত্তন, শনিবার (১৫ অক্টোবর) প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালা শেষ হবে।
গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জানে আলম জানিয়েছেন, এবারের উৎসবকে ঘিরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মহোৎসব ও উৎসবকে ঘিরে মেলা- এসব নির্বিঘেœ করতে মাঠে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্ট বোর্ডের কয়েকশ’ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের সম্পাদক শ্যামাপদ স্যানাল জানান, ১৩ অক্টোবর অধিবাস, ১৪ অক্টোবর মূল মহোৎসব এবং বাসি মহোৎসব ও মহন্তবিদায় অনুষ্ঠিত হবে। মূল কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাব কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজগুলো সুচারুভাবে করা হয়। তিনদিন আগ থেকেই ভক্তদের সমাগম ঘটে থাকে। সব সময় দুই লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি থকে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আসা মানুষের সাহায্য করে থাকেন। এলাকার মুসলমান ভাই, বোন নিজেদের অনেক কষ্ট সহ্য করে আসা ভক্তদের সাহায্য করে থাকেন।
তিনি আরও জানান, গোদাগাড়ী থানা পুলিশ, জেলা পুলিশের ৫০০ জন সদস্য, ৩০ জন আনসার, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী, চিকিৎসক ও দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত কাজ করছেন। ১৬টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে ৩০ বিঘা জমির ওপর অনুষ্ঠিত এ মহোৎসব।
গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দিরের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। লাখ লাখ নারী-পুরুষ ভক্তের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাদ, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতায়াত নির্বিষন করতে প্রেমতলী বাজার থেকে খেতুরিধাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়কটিতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসা ভক্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল টিম গঠন করে অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করে স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রস্তুত আছে।