মোঃ জহুরুল ইসলাম কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:।
প্রতিদিন ভোরে কিংবা মাঝরাতে যখন ঘুম ঘুম চোখে শহর জেগে ওঠে কিংবা নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে, তখনও দেশের সড়কে ছুটে চলেছে এক শ্রেণির মানুষ—ট্রাক শ্রমিক। তারা পণ্য পৌঁছে দেয় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, চাল, পেঁয়াজ, ইস্পাত, ওষুধ থেকে শুরু করে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য তাদের হাত ধরেই পৌঁছায় গন্তব্যে। অথচ এই পরিশ্রমী মানুষগুলোর জীবনে নেই নিরাপত্তা, নেই ন্যায্য অধিকার।
মে দিবস এলেই বক্তৃতার মঞ্চে ওঠে শ্রমিকদের জন্য সুবিচারের কথা। কিন্তু ট্রাক চালক ও সহকারীদের কেউ ডাকে না সেসব আলোচনায়। তাদের জীবনের কঠোর বাস্তবতা যেন থেকেও নেই।
একজন অভিজ্ঞ ট্রাকচালক মো. তরুণ আলী বলেন, “আমরা ১২-১৪ ঘণ্টা গাড়ি চালাই, রাস্তায় থাকি দিনের পর দিন। রাস্তায় ডাকাতির ভয়, পুলিশের হয়রানি, রাস্তার দুর্ঘটনা—সব মিলিয়ে একটা যুদ্ধ চালাই প্রতিদিন। কিন্তু যখনই সমস্যা হয়, কেউ পাশে থাকে না।”
সহকারী (হেলপার) কারিবুল ইসলাম জানালেন, “ঘুম নেই, বিশ্রাম নেই। গাড়ির নিচে পড়ে গেলে খবর হয় না। অথচ আমাদের নিয়েই তো পণ্য পৌঁছায়, দেশের অর্থনীতি চলে।”
বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের দাবি, ট্রাক শ্রমিকদের জন্য আলাদা বিশ্রাম কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্ঘটনা বিমা এবং কর্মঘণ্টার সীমা নির্ধারণ জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ শ্রমিক এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
আজ মে দিবসে শহরের কোনো একটি মোড়ে কিছু ট্রাকচালক জড়ো হয়েছিলেন—কেউ কোনো দাবি জানাতে নয়, শুধু বলতে, “আমাদের কথা কেউ ভাবে না।”
সাংবাদিক হিসেবে যখন এই জীবনগুলোকে কাছ থেকে দেখি, তখন শুধু মনে হয়—এই মানুষগুলোই আমাদের জীবনচক্রের চাকা ঘোরান। অথচ তারা নিজেরাই পড়ে থাকেন সমাজের চাকার নিচে।
মে দিবস কি শুধুই গার্মেন্টস কিংবা কল-কারখানার শ্রমিকদের জন্য? ট্রাক শ্রমিক কি শ্রমিক নন?
আজকের দিনে আমাদের নতুন করে ভাবা উচিত—এই চাকার ঘূর্ণনের পেছনের মানুষগুলোকে কতটা মূল্য দিচ্ছি আমরা?