আবু ইউসুফ সহ- বার্তা সম্পাদক জাতীয় দৈনিক মাতৃজগতঃ
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের এই অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য শিল্প এলাকায় এক বা একাধিক সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে। এই চক্র মূলত বাংলাদেশ থেকে মালামাল অন্যান্য দেশে রপ্তানি করার সময় কারখানা থেকে পোর্টে নিয়ে যাবার পথে কোন একটা সময় কার্গো বা কাভার্ডভ্যান থেকে বড় একটা অংশ কৌশলে অন্য কোথাও নামিয়ে রাখে। মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যান বা কার্গো এর চালক এবং সহকারী এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজ করে। দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিগুলোর জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তাদের কন্ট্রাক্টের যানবাহনের দ্বারা মূলত এই অপরাধগুলো সংগঠিত হয়। আর এদের পেছনে কাজ করে বড় এক বা একাধিক চক্র। দেশের প্রায় সকল শিল্প এলাকাতেই এদের অশুভ কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়, যাদের কাজের জন্য যথাসময়ে সঠিকভাবে মালামাল রপ্তানি করা সম্ভব হয়না এবং দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বাংলাদেশ পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পণ্য পরিবহন এজেন্সি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতায় এই অপরাধ কর্মকান্ড দূর করা সম্ভব।
সম্প্রতি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার অন্তর্গত এস.পি গার্মেন্টস্ এন্ড ওয়াশিং লিঃ এর পণ্য রপ্তানির সময় এ রকম একটি ঘটনা ঘটে। এই প্রতিষ্ঠানের মোট ৬৪১ (ছয়শত একচল্লিশ) কার্টন অর্থাৎ ১১,৬৪০ (এগার হাজার ছয়শত চল্লিশ) পিস তৈরী পোশাক (প্যান্ট) রপ্তানির লক্ষ্যে কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানযোগে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পোর্টে পৌঁছানোর পর পোর্টের কে.ডি.এস ডিপো বর্ণিত হিসাবে ৪,৮০০ (চার হাজার আটশত) পিস তৈরী পোশাক (যার সর্বমোট মূল্য আনুমানিক ৬০,৪৮,০০০/- টাকা) কম পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানায় মামলা রুজু হলে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বিপিএম এর দিক-নির্দেশনায় মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের কয়েকজন সদস্য মিলে মিথ্যা নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে এসপি গার্মেন্টস এর কারখানা থেকে পণ্য বুঝে নেয়, পথিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ এ তাদের চক্রের অন্যান্য সদস্যরা উল্লিখিত পরিমাণ মালামাল চুরিপূর্বক তাদের নির্ধারিত গোডাউনে রেখে দেয়ার পর বাকী মালামাল পোর্টে পৌঁছে দেয়। পোর্টে মালামাল পৌঁছে দিয়ে কৌশলে তারা সেখান থেকে চলে এসে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক একাধিক অভিযান পরিচালনা করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সহিদুল ইসলাম অপরাধচক্রের দশজন সদস্য কে গ্রেফতার করে এবং গত ১৭.০৫.২০২২ তারিখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, গাজীপুর সদর সার্কেল সানজিদা আফরিন এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার সহ অন্যান্য ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর থানাধীন একটি বাসা থেকে চোরাই মালামাল (৩,১০০ পিস তৈরি পোশাক) উদ্ধার করা হয় এবং ঘটনায় ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং পর্যাপ্ত তথ্যসাপেক্ষে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে।তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।