রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৪ অপরাহ্ন
ঘোষনা
দুর্গাপুরে যুবদলের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীত বস্ত্র বিতরণ ,শহীদ বিআরটিএ ও পরিবহন মালিক শ্রমিক ফেডারেশনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা কার্যক্রম  দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির কামনায় অসহায় মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র উপহার  মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গিয়াস উদ্দিন মামলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৪ জন চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করেছে।   জুলাই ঘোষণাপত্র সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে চাই উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সৌজন্য সাক্ষাত, বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকেরিয়া হোসেন। বাসুদেবপুর ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত  রাজশাহীতে (পুনাক) পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ গোদাগাড়ীতে বিএনপির কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

জামাত নেতার লালসার শিকার নারী, দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ মায়ের রাত কাটছে রাস্তায়

ইয়াছিন আরাফাত
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৪৭ বার পঠিত

দশ মাসের দুধের শিশুসহ স্ত্রীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে স্বামী। কোথাও যাবার জায়গা না পেয়ে স্ত্রীও নিরুপায় হয়ে স্বামীর সুরম্য অট্টালিকার সামনে দুই সন্তান সহ বসে আছে। নাওয়া নেই-খাওয়া নেই। এভাবে কেটেছে টানা এক রাত। জানা নেই আর কত রাত এভাবে কাটিয়ে দিতে হবে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর এলাকার মোড়লদের জঘন্য আচরণের কাছে ঝড় বৃষ্টি আর মশার কামড় ছিলো অতি তুচ্ছ। এমন অমানবিক দৃশ্যের দেখা মিলেছে কক্সবাজার শহরের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন সিকদার পাড়ায়।

 

জানা যায়, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প সিকদার পাড়ার মাস্টার ফরিদুল আলমের ছেলে জামায়াত নেতা মো. ওসমান গণির (৪৫) নির্দেশে অপরাপর ভাইদের সহযোগিতায় স্ত্রী জোনাকী আক্তারকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে জোনাকী আক্তার উপায় খুঁজে না পেয়ে স্বামীর বাড়ির সামনেই দুগ্ধপোষ্য দশ মাসের শিশুসহ সহ দুই সন্তানকে নিয়ে বসে পড়ে। এঘটনা এলাকার চতুর্দিকে জানাজানি হলেও পাষাণ হৃদয়ের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়নি। উল্টো জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ ডেকে এনে হেনস্থা করতে চেয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী নারী জোনাকির।

 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত জামাত নেতা ওসমান গণী কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে অবস্থিত সী উত্তরা নামের একটি হোটেলে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেন। যেখানে জামায়াতের নিয়মিত বৈঠকও হয়। সে সুবাদে তিনি অসংখ্য নারীকে নানা ভাবে প্রলোভনে ফেলে ওই হোটেলের বিলাসবহুল রুমে নিয়ে গিয়ে যৌন লালসা চরিতার্থ করেন। এদের মধ্যে একজন হলেন ভুক্তভোগী জোনাকি আক্তার। বছর তিনেক আগে ওসমান গণি নিজেকে বিপত্নীক দাবী করে জোনাকির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। দীর্ঘদিন লিভটুগেদার করার পর জোনাকিকে রক্ষিতা হিসেবে থাকার প্রস্তাব দেন ওসমান। অন্যদিকে জোনাকি সামাজিক মর্যাদার দাবীতে বিয়ের জন্য চাপ দেয় ওসমানকে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ওসমান। পরবর্তীতে কক্সবাজারের তারাবনিয়ারছড়াস্থ কাজী অফিসে ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতে যৌতুক দাবী করে জোনাকিকে মানসিক ভাবে চাপ দিতে থাকেন ওসমান। এর জের ধরে দম্পতির মাঝে কলহ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ওসমানের পিতা ও ভাইয়েরা মিলে জোনাকিকে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেন। এবং শারিরিকভাবে নির্যাতন করেন।

 

ভুক্তভোগী জোনাকি জানান, তার আগের একটি সংসার ছিলো। প্রবাসী স্বামীর ওই সংসারেও মনোমালিন্য চলছিলো। বিষয়টি জানতো ওসমান। তখন ওসমান তাকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগের সংসার ত্যাগ করতে চাপ দিতে থাকে। তার প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা রেখে পূর্বের সংসার ত্যাগ করে ওসমানের সংসারে আসে। কিন্ত ওসমান সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ না করে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। পরকীয়াতে বাঁধা দিলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে বসে। সেই দুই লাখ টাকা সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারকে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্ত তাকে এত টাকা যৌতুক দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুগ্ধপোষ্য শিশু ও আরও এক সন্তান সহ ঘর থেকে মারধর করে বের করে দেয়। জোনাকি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার কামনা করেছেন। এঘটনায় তিনি প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিবাদী ওসমানকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর স্বশরীরে তলব করেছে আদালত।

 

জোনাকি আরোও দাবি করেন, আমার সংসার ভাঙার পেছনে মূল ইন্ধনদাতা হচ্ছেন ওসমানের বন্ধু সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার। তাকে কিছুদিন আগেও তিন লাখ টাকা দেন ওসমান। এখন আরও দুই লাখ টাকা যৌতুক আদায় করে তাকে দিতে চাচ্ছেন ওসমান। আবছার তাকে তার স্কুলের সভাপতি বানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন বলে কানাঘুষা রয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, ওসমান তার সমাজ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন। এক সময় তিনি খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু পরকিয়া এবং নারীদের সাথে অবাধ মেলামেশার কারণে প্রথম স্ত্রী তাকে ভিভোর্স দেন। এবং ১০ মাসের এক কন্যা শিশুও তার কাছে রেখে চলে যান। বর্তমানে ওই কন্যা সন্তানটি তার পরকিয়া প্রেমিকা ফারজানা ইসলাম নামের এক বিধবা নারীর কাছে রয়েছে। ফারজানা বর্তমানে ওসমানের রক্ষিতা হিসেবে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

 

এদিকে অভিযুক্ত ওসমান গণির বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে না পেয়ে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করে প্রতিবেদক। ওসমান গত একমাস ধরে ঘর থেকে পলাতক থাকায় তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে তার কর্মস্থল হোটেল সী উত্তরায় যোগাযোগ করা হলে সেখানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সেখানেও তার সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

 

মুঠোফোনে ছিদ্দিক নামে হোটেলটির এক কর্মকর্তা জানান- তিনি আজ হোটেলে আসেননি। এছাড়াও ওসমানের পরিবার থেকে তার পিতা ফরিদুল আলম প্রতিবেদককে জানান- মেয়েটাকে ছেলে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং মেয়েটার এখন এই ঘরে থাকার সুযোগ নেই। ডিভোর্সের দাবীর পক্ষে বৈধ কোনো কাগজ পত্র সাথে রয়েছে কীনা জানতে চাইলে ফরিদ চট্টগ্রাম আদালত কর্তৃক সত্যায়িত এক তরফা রায় সম্বলিত তালাক নামার একটি কাগজ দেখান।

 

ঘটনাটি কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দিনকে অবগত করে সহায়তা চাইলে তিনি জানান- এধরণের ঘটনায় পুলিশের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবে ভিকটিম যদি সরাসরি থানার সহায়তা চায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এছাড়াও এনজিও মানবাধিকার সংগঠনগুলো দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসলে ভিকটিমের আইনী সহায়তা পেতে কিছুটা সহজ হয়।###

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991