মোঃ আফ্ফান হোসাইন আজমীর, রংপুর ব্যুরো প্রধানঃ রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমসহ আরও চারটি পণ্যকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়ে জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। পণ্য চারটি হলো— রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর ও মুক্তগাছার মন্ডা। এ নিয়ে বাংলাদেশে অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮টি। সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
জানাগেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ, খোড়াগাছ এলাকা হাঁড়িভাঙ্গার জন্য বিখ্যাত। এই খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি এলাকার আমজাদ হোসেনের বাবা নফল উদ্দিন পাইকার প্রায় ৮০ বছর আগে মূল হাঁড়িভাঙা আম গাছটির রোপন করেছেন। তিনি বালুয়া মাসিমপুর এলাকার জমিদার তাজ বাহাদুর সিংহ সৌখিন ছিলেন। তার কয়েকটি বাগান ছিল। সেই জমিদারের কাছ থেকে পেশাদার ব্যবসায়ীরা আম কিনে পদাগঞ্জ হাটে বিক্রি করতো। সেই আম কিনে আনেন তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকার। আম খেয়ে মাটির হাঁড়ির ভিতর থেকে আমের গাছ বের হয়েছে বলে তার নাম দেয়া হয় হাঁড়িভাঙ্গা। এর পরেই তিনি করম চারা করে তা বিক্রি করেন। বর্তমানে মূল হাঁড়িভাঙ্গা গাছটি বেঁচে রয়েছে ও ফলও দিচ্ছে। তবে ১৯৯২ সালে হাঁড়িভাঙ্গার সম্প্রসারণ শুরু হয়। বর্তমানে দেড় হাজার হেক্টও জমিতে এই আম চাষ হয়। রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান এই হাঁড়ি ভাঙ্গা আমের জিআই পণ্য হিসেবে মর্যাদার জন্য চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখিতভাবে সে সময় মন্ত্রনালয়কে জানিয়েছেন। তার ফলশ্রম্নতিতে গতকাল বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।
জানাগেছে,২০০৩ সালে বাংলাদেশে এ কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে একে পেটেন্ট, শিল্প—নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) নামে অভিহিত করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ফলে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ পাস হয়। এর দুই বছর পর ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়।
২০১৬ সালে জামদানি শাড়িকে বাংলাদেশে প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর স্বীকৃতি পায় আরও ২০টি পণ্য।
সেগুলো হলো— বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুর কাটারীভোগ, বাংলাদেশ কালিজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী—চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, বাংলাদেশের শীতল পাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই ও কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
স¤প্রতি অনুমোদিত তিনটি পণ্য টাঙ্গাইল শাড়ি, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা ও গোপালগঞ্জের রসগোল্লার অনুমোদনের কপি ও জার্নাল গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। এতে জিআই পণ্যের সংখ্যা হয় ২৪টি। আজ ৪টি জিআই পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হওয়ায় মোট অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮টি।
এছাড়া আরও দুটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো হলো— জামালপুরের নকশিকাঁথা এবং যশোরের খেজুর গুড়। আগামী সপ্তাহে এই দুটি পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।