রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন
ঘোষনা
শিরিন শিলার জিডি, মামলার হুঁশিয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান ফ্লাই দুবাই জেলা যুবদলের সভাপতি জাকিরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন কাশিয়ানীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ডাকাত আটক চতলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে চারটি উন্নত মানের সিলিঙ ফ্যান প্রদান করেছে শান ফাউন্ডেশন  বৈষম্যহীন আইডিইবি-২০২৪ এর মতবিনিময় ও আলোচনা সভার আয়োজন  *৩ নং সুবিদপুর (পূর্ব) ইউপি চেয়ারম্যান কে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ* বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল স্কুল শিক্ষকের  নেত্রকোনার বারহাট্টায় মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুরের অভিযোগ

টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে মনু নদের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

মোঃ জালাল উদ্দিন
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৬ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যায় মৌলভীবাজারের রাজনগরে মনু নদ প্রকল্প বাঁধের একাধিক স্থান ভেঙে যায়। অনেক স্থানে বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার লোকালয়ে ঢুকছে মনু নদের পানি। ফসলের মাঠ ডুবছে। বাড়িঘরে পানি উঠছে। মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের একাধিক স্থান পানিতে তলিয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট ২০২৪ ইং, সকাল সাড়ে আটটার সময় রাজনগর উপজেলার মুনসুরনগর ইউনিয়নের কদমহাটা এলাকায় পানি উপচে মনু নদ প্রকল্পের বাঁধের একটি স্থান ভেঙে যায়। একই এলাকায় পাশাপাশি আরও তিনটি স্থান দিয়ে পানি উপচে বের হচ্ছে। অন্যদিকে মনু নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মৌলভীবাজার শহরের মানুষ গতকাল বুধবার রাতটি বন্যার আতঙ্কে নির্ঘুম কাটিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গতকাল রাতে রাজনগর উপজেলার শ্বাসমহল এলাকায় মনু সেকেন্ডারি বাঁধ (নদসংলগ্ন বাঁধ) ভেঙে সেকেন্ডারি বাঁধ ও মনু নদ প্রকল্প বাঁধের মধ্যবর্তী গ্রামের লোকালয়ে পানি ঢোকে। রাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় সব ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সময় যে যা পেরেছেন, সঙ্গে নিয়ে ঘর ছেড়েছেন। অনেকেই কদমহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কদমহাটা উচ্চবিদ্যালয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গেছেন।

এদিকে সকালের দিকে কদমহাটায় বাঁধের একটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে রাজনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এই পানি গিয়ে নামছে কাউয়াদিঘি হাওরে। কাউয়াদিঘি হাওরপারের সব কটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

কদমহাটার বন্যাকবলিত জেলি বেগম বলেন, রাত তিনটার দিকে ঘরে পানি ঢুকছে। পানি এরপর আর সময় দিছে না। তুরাতুরি (অল্পকিছু) যা পারছি, লইয়া বাইর অইছি (নিয়ে বের হয়েছি)। এখন অন্য জায়গায় উঠছি।

সকাল সাতটার সময় কদমহাটা গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই কদমহাটা বাজারের পূর্ব দিকে মনু প্রকল্প বাঁধের অন্তত চারটি স্থান দিয়ে পানি উপচে বের হচ্ছে। দ্রুতগতিতে পানি নামছে। বাঁধের অংশ টুকরা টুকরা হয়ে ধসে পড়ছে। বন্যার আতঙ্কে পানির কাছে ছুটে আসছেন অনেক মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রাতে স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পানি উপচানো বন্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মনু নদের পানি দ্রুত বাড়ায় তাঁদের সব চেষ্টা ভেস্তে গেছে। সকাল থেকে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁরা হাল ছেড়ে দেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে কদমহাটা বাজারসংলগ্ন পূর্ব দিকে বাঁধের একটি স্থান ভেঙে যায়। এতে হু হু করে পানি ঢুকতে থাকে গ্রামের দিকে। অল্প সময়ের মধ্যে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা এলাকা কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের ভাঙারহাটে মনু নদ প্রকল্পের বাঁধের একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের পানি রাজনগর উপজেলা সদরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে। মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের রাজনগর কলেজ এলাকা মনু নদের পানিতে তলিয়ে গেছে।

মনু নদে পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় শহরবাসীর মধ্যে বন্যা–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহর প্রতিরক্ষা দেয়াল চুইয়ে শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের পশ্চিম বাজারের দিকে পানি ঢুকতে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাটির বস্তা ফেলে স্বেচ্ছাশ্রমে শহর প্রতিরক্ষা দেয়াল চুইয়ে শহরের দিকে পানির প্রবেশ বন্ধ করেন। সারা রাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যাঁর মতো একে অন্যকে সতর্ক করেছেন। বন্যা-আতঙ্কে শহরের মানুষ অনেকটাই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী জাহেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, শহর প্রতিরক্ষা দেয়াল চুইয়ে পানি প্রবেশ বন্ধে স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, অনেক ক্রিকেটার, অনেক তরুণ, ব্যবসায়ী সহযোগিতা করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা দিয়েছে। সবাই মিলে পানি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুর ১২টায় মনু নদের পানি রেলওয়ে ব্রিজে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও চাঁদনীঘাটে ১১৮ সেন্টিমিটার, ধলাই নদে রেলওয়ে ব্রিজের কাছে ৩০ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী শেরপুরে ৮ সেন্টিমিটার এবং জুড়ীর ভবানীপুরে ১৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেখা গেছে, মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজ ও ধলাই নদের রেলওয়ে ব্রিজের কাছে পানি কিছুটা কমার দিকে। সকাল ৯টায় মনু রেলওয়ে ব্রিজে পানি ছিল ১০৫ সেন্টিমিটার ও ধলাইয়ে ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে।

  • পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, সারা রাত মনু নদের পাড়ে কেটেছে। পানি কিছুটা কমেছে। মনুর রেলওয়ে ব্রিজের কাছে পানি কমাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া প্রচুর স্রোত আছে। এতে বোঝা যায়, পানি নিচের দিকে নামছে। উজানে (ভারতের কৈলাশহরে) বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও এখন বৃষ্টি বন্ধ আছে। মনু নদের সেকেন্ডারি ও প্রকল্পের পাঁচ স্থানে বাঁধ ভেঙেছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991