আজহারুল ইসলাম সাদীঃ
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী আবেদ খান দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্পাদক হিসেবে গত দুই দশক যাবত অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন।
তিনি যেমন নিজের অবস্থানকে তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতায় ও সময়োপযোগী নেতৃত্বের বদৌলতে একটি অনন্যমাত্রায় উন্নীত করতে সফল হয়েছেন, ঠিক তেমন দেশের গণমাধ্যম সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে রেখে চলেছেন অবিস্মরণীয় ভূমিকা।
প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিতব্য “দৈনিক কালবেলা”র সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
পাশাপাশি “দৈনিক জাগরণ ” পত্রিকায় ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কলামিস্ট বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান ১৯৬২ সালে ১৭ বছর বয়সে ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকতায় যুক্ত হন “দৈনিক জেহাদ” পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৬৩ সালে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক-এ যোগ দিয়ে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি পর্যায়ক্রমে শিফট-ইনচার্জ, প্রধান প্রতিবেদন, সহকারী সম্পাদক ও কলামিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬-৯৯ সালে তার অণুসন্ধানমূলক টেলিভিশন রিপোর্টিং সিরিজ ‘ঘটনার আড়ালে’ টেলিভিশন-সাংবাদিকতার আরেকটি জনপ্রিয় চূড়া।
১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি একুশে টেলিভিশনের সংবাদ ও চলতি তথ্য বিষয়ে প্রধান হিসেবে কাজ করেন।
২০০৩ সালে সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ভোরের কাগজে যোগ দেন, ২০০৫ সালে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক পদে যোগদেন। দৈনিক সমকালের সম্পাদক হিসেবে ২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক কালের কণ্ঠের একজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ২০১১ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটিএন নিউজের প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ আমলে অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিংয়ের সূচনা হয় তাঁর হাতেই। তাঁর বিখ্যাত ‘ওপেন-সিক্রেট’ সিরিজ আজ পর্যন্ত এ দেশের সাংবাদিকতার জগতে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে। এ সংক্রান্ত পড়াশোনায় ‘রেফারেন্স’ হিসেবে ‘ওপেন সিক্রেট’-এর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া, দেশের সংবাদ মাধ্যমে কলামিষ্টকে তিনিই পেশায় রূপান্তরিত করেন।
সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময়ই তিনি অভাজন ছদ্মনামে তাঁর পাঠকপ্রিয় ‘নিবেদন ইতি’ শিরোনামে কলাম লেখায় মনযোগী হন; যেটি সেসময় অভাবিত জনপ্রিয়তা পায়। ভোরের কাগজ-এ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘টক অফ দ্যা টাউন’, জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘গৌড়ানন্দ কবি ভনে শুনে পুণ্যবান’, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে এই প্রতিবেদনগুলোর মধ্য দিয়েই আবেদ খান তুমুল জনপ্রিয়তায় দেশবাসীর কাছে হয়ে ওঠেন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
তাঁর সম্পাদিত দৈনিক জাগরণে রাজনৈতিক ইতিহাসমূলক কলামগুলো ইতিহাসের নিরিখে অমরত্ব পাবে বলে বিবেচনা করেন অনেকেই।
তিনি এক সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় উপস্থাপক, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ছয় বছর।
১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন এই গুণীজন। সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ‘প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ’ (পিআইবি) চেয়ারম্যান- এর দায়িত্বটি সফলভাবে শেষ করেছেন।