নওগাঁর নিয়ামতপুরের বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি সহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার জালিয়াতিতে এমপিও বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থনীতির প্রভাষক মো. এরশাদ আলী। অধ্যক্ষের জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন মাউশির তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা।
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুরের বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আমজাদ হোসেনের জালিয়াতিতে ২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়া অর্থনীতির প্রভাষক মো. এরশাদ আলীর এমপিও এখনো হয়নি। তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আটজন শিক্ষকের ভূয়া ও টেম্পারিং করা কাগজপত্র তৈরি করে এমপিওর প্রস্তাব করেন অধ্যক্ষ।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. শামসুদ্দিন ইলিয়াসের পাঠানো পত্রের অনুমোদন সাপেক্ষে বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়।
ওই বছরের ৩১ আগস্ট বোর্ড গার্হস্থ্য অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের জন্য তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়। গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে ফারহানা আফরোজ, মনোবিজ্ঞানে মো. শহিদুজ্জামান ও অর্থনীতি বিভাগে এরশাদ আলী নামে তিন জন নিয়োগ পান।
২০১৫ সালের শেষের দিকে পরিচালনা পরিষদের সব নিয়োগ ক্ষমতা চলে যায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে। এতে বিচলিত হয়ে পড়েন বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন।
কারণ, এনটিআরসিএ’র ক্ষমতা গ্রহণের আগেই আরও পাঁচজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গভর্নিং বডির কাউকে না জানিয়ে ঐ তিন শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালকের প্রতিনিধি স. ম. আব্দুস সামাদ আজাদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সারওয়ার জাহানের স্বাক্ষর জাল করেন আমজাদ হোসেন।
এর মাধ্যমে দর্শনে কামাল হোসেন, বাংলায় মানিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাকির হোসেন, ইংরেজি রাজীব ও ভূগোলে আবু রায়হানসহ পাঁচ জন এবং আগের তিন জনসহ মোট আট জনকে নিয়োগ দেখান। কলেজ অধ্যক্ষ পাঁচ জনের অবৈধ নিয়োগ বৈধ করার জন্য প্রভাষক এরশাদ আলীর বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত সব চিঠিপত্র এবং রেজুলেশন টেম্পারিং করেন।
নিয়োগ বোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির চিঠি, ডিজি প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠি, সাক্ষাৎকার বোর্ডের ফলাফল শিট ও রেজুলেশনসহ নিয়োগ সংক্রান্ত সব ধরণের কাগজ নকল করে পাঁচটি বিষয়সহ মোট আটটি বিষয় নিয়োগ উল্লেখ করে এমপিও আবেদন প্রস্তুত করেন তিনি।
২০১৫ সালের ২২ আগস্ট তারিখের মূল রেজুলেশন কাটাকাটি ও ঘষামাজা দেখে সন্দেহ হলে এরশাদ আলী ও দর্শন বিভাগের শিক্ষক কামাল হোসেনের এমপিও আবেদন বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, রাজশাহী অফিস।
শিক্ষা অফিস থেকে অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের কাছে এ জালিয়াতির কৈফিয়ত চাওয়া হলে তিনি দীর্ঘদিন কোনো জবাব দেননি। এক পর্যায়ে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক গত বছরের ২৭ অক্টোবর কলেজে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে অধ্যক্ষের সব জালিয়াতির প্রমাণ পান।
অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এরশাদ আলী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, রাজশাহী অফিস।
গত ২০ মে মাউশির সহকারী পরিচালক মো. আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাজমুল হাসান ও একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনকে।
চিঠিতে তাদের ১৪ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তারা সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন এবং শিক্ষকের (এরশাদ আলী) অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান।
এরশাদ আলী জানান, অধ্যক্ষ এই অপকর্ম থেকে বাঁচার জন্য তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য কলেজ প্যাডে অনাপত্তিপত্র লিখে নিজের প্রতিস্বাক্ষর করে তার ( এরশাদ আলী ) স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য জোর করেন এবং নানা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু তিনি স্বাক্ষর করেননি।
গভর্নিং বডি ও নিয়োগ বাছাই কমিটির সদস্য মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনজন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। অধ্যক্ষ অবৈধভাবে আটজন শিক্ষকের কাগজ তৈরি করেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের জালিয়াতিতে এরশাদ আলীর এমপিও এখনো হয়নি। কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এরশাদ আলী।