মোঃ মিন্টু শেখ ক্রাইম রিপোর্টারঃ বদলি হলেন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা নড়াইলের কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান।
অবশেষে বদলির আদেশ হয়েছে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের। এতে স্বস্তি ফিরেছে শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঝে। বদলি হওয়া এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তিনি শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির দাপট দেখিয়ে নড়াইলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়মের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটিও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। তবে কত টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে সেটি গণমাধ্যমকে জানায়নি তদন্ত কমিটি।
শিল্পকলার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ ভুক্তভোগীদের হিসাবমতে হামিদুর রহমান প্রায় ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করবে এমন দাবি ভুক্তভোগীদের।
তবে হামিদুর রহমানকে অপসারণে নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নড়াইলের একজন জনপ্রতিনিধির পরিবারের আশীর্বাদ এবং শিল্পকলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির সুদৃষ্টির কারণে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান যা ইচ্ছে তাই করে গেছেন মর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক ডক্টর সৈয়দ জামিল আহমেদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বদলির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান নড়াইলে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পী, কলাকুশলী, বিচারক ও উৎসব সমন্বয়কারীর সম্মানী না দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে হামিদুর রহমান বিরুদ্ধে। এছাড়া যাতায়াত ভাড়া না দেওয়া, সাজসজ্জা, প্রচারণা, প্রশিক্ষণ, কর্মশালাসহ জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনের সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এ প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ৫২ জন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করে হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠান। এরই সূত্র ধরে গত ২ এপ্রিল শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে তদন্তদল নড়াইলে আসেন। হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদসহ তিনজন কর্মকর্তা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাক্ষ্য নেন। সবাই হামিদুর রহমানের দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিলেও দীর্ঘদিন ধরে স্বপদে বহাল ছিলেন তিনি। মূলত শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির প্রভাবে হামিদুর রহমান কাউকে সমীহ করতেন না। এর আগে ময়মনসিংহ থাকতেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সেখান থেকে হামিদুরকে প্রত্যাহার করা হয়। ময়মনসিংহের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েও গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়। নড়াইলে যোগদান করার পরেও অনিয়ম ও দুর্নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন হামিদুর।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংগীত বিভাগের শিক্ষক আশিষ কুমার স্বপনসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকার নির্ধারিত সম্মানী ভাতা না দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করাতেন। গালমন্দ করতেন। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন। এ কারণে একাডেমিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। তিনি নড়াইলের সংস্কৃতি অঙ্গনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এসব কারণে গত ৫ এপ্রিল থেকে অদ্যাবধি শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনের মধ্যে আছেন। কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বদলির পর আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই।
তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেছেন।