শেখ মোঃ হুমায়ুন কবির, চিফ রিপোর্টার: রমজান মাসকে রাসুল (সাঃ) কোঁচড় ভরে গ্রহণ করতেন। মিনতি করে মহান রবের সমীপে কাঁন্নাকাটি-রোনাজারি করতেন। নবী করিম (সাঃ) রমজানে দোয়া কবুলের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়।
বছর ঘুরে আবারও এলো সিয়াম সাধনার মাস। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা’র সম্পাদক ও বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (কেন্দ্রীয় কমিটি’র) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান সেলিম রহমান, শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন।
রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, হে মুমিনগণ তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ -সূরা বাকারা, ১৮৩ আয়াত
এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং, এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। -সূরা ইউনুস : ৫৮
পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। করা হলে, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন নবীজি (সাঃ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন।
তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো
খান সেলিম রহমান আরও বলেন।
সা’আদ (রঃ) থেকে বর্নিত আছে যে। রাসূল (সাঃ) আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে সেখান দিয়ে সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কেহ্ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: সিয়াম পলনকারী কোথায়? তারা দাঁড়াবে, তারা ছাড়া আর কেহ্ প্রবেশ করবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেহ্ সে স্থান দিয়ে প্রবেশ করবে না। -বুখারী মুসলিম, ১৮৯৬
ইমাম আহমদ (রঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) আলাইহি অসাল্লাম বলেন।
সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে, সিয়াম বলবে, হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলায় খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলবেন, তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হল।
রমজান মাসের অন্যতম বরকত হল, এ মাসে ভাল কাজের প্রতিদান বহু গুণে বেড়ে যায়। রোযা একমাত্র আল্লাহর জন্য, আর রোযার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা নিজে দিবেন। শুধু আল্লাহর ভয়েই বান্দা পানাহার, যাবতীয় যৌন কামনা বাসনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে। অন্যথায়, পৃথিবীর এমন কোন শক্তি কি, যা তাকে গোপনে এক ঢোক পানি পান করা থেকে বিরত রাখতে পারে। রোযাদার পিপাসায় কাতর অবস্থায় ওযু করার জন্য মুখে পানি নেন, কুলি করে মুখভর্তি পানি আবার ফেলে দেন, কিন্তু এক ঢোক পানি কন্ঠনালীর নিচে নামতে দেন না।
কার ভয়ে, কার প্রেমে, কার ভালোবাসায়, কোন সত্তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কোরবানির এই নজরানা। কার মুহাব্বতে ত্যাগের এই উপস্থাপনা, কার সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে ক্ষুধা পিপাসার এই কষ্ট সহ্য করা।
বস্তুতঃ একমাত্র আল্লাহ তাআলার ভয়ে, আল্লাহ তা’য়ালার মুহাব্বতে, আল্লাহ তাআলার ভালোবাসায় বিগলিত হৃদয়ই রোযার কষ্ট সহ্য করে করে তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার যোগ্য। কেউ দেখছে না, কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তো দেখছেন। কেউ জানছে না, কিন্তু আল্লাহ তাআ’লা তো জানছেন। আহা! জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি এই অনুভূতি লাভ করতে পারতাম! এজন্যই তো রোযার প্রতিদান দিবেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। বান্দার চাহিদা মাফিক নয়, বরং মহান রব্বে কারিম নিজের শান অনুযায়ী।
খান সেলিম রহমান আরও বলেন, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে, ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ, এমনকি পরম করুণাময় দয়ালু মেহেরবান মহান আল্লাহ্ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, তবে রোযার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোযা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকে। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ, এক ইফতারের মুহূর্তে এবং দুই রবের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তে। আর রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম। -সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৫১
আসুন আমরা সকলেই পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষ করে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য সিয়াম স্বাধনা করি।
মাতৃজগত পরিবার ও বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (কেন্দ্রীয় কমিটি’র) পক্ষ সকলকে জানাই সকলকে জানাই পবিত্র মাহে রমজানের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
খান সেলিম রহমান
সম্পাদক, জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (কেন্দ্রীয় কমিটি)।