বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীঃজাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর একজন অনুসারী, বঙ্গবন্ধু মনে প্রাণে গান্ধীজির অসহিংবন নীতি বা রাজনীতিতে সহিংস ভাব পরিহার করার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁর রাজনৈতীক চিন্তা চেতনায় তিনি কবি নজরুলের সাম্যের জয় গান করে গেছেন, তিনি বিশ্বাস করতেন রাস্ট্র দেশ স্বাধীনতা সব কিছুর মূল হতে হবে মানুষের সেবা। কবি নজরুলের মত তিনি লিখতে পারেন নাই, গাহি সাম্যের গান মনুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান, হিন্দু মুসলিম ভাই সবার উপড়ে মানুষ সত্যতার উপড়ে নাই।
যাহোক বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক দর্শনে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর অসহিংস নীতি অনুসরণ করতেন যে কারণে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশ সৃস্টি পর্যন্ত এমনকি তিনি তার জীবদ্দশায় সকল ক্ষেত্রে অসহিংস নীতি মেনে রাজনীতি করে গেছেন ।মহাত্না গান্ধীকে ভারতের জাতির পিতা বলা হলেও, সাংবিধানিকে ভাবে তার কোন স্বীকৃতি নেই, বলা হয়ে থাকে নেতাজি সুভাষ চঁন্দ্র বসু সিঙ্গাপুর থেকে বেতারে মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে প্রথম মহাত্মা গান্ধীক জাতির পিতা উপাধিতে ভূষিত করেণ। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনী বয়ে বলেছেন ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বর্তমান মওলানা আজাদ কলেজে ভর্তি হন, সেখানে তিনি ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত পড়ালেখা করে স্নাতক পাশ করেন, তিনি সেখানে বেকার হোস্টেলে ২৪ নং কক্ষে থাকতেন যেটা যতিবসু সরকার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির স্মরণে ২৩ এবং ২৪ নং রুম স্মৃতি রুম হিসেবে সংরক্ষণ করেছেন এবং একবার কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর সাথে বঙ্গবন্ধুর প্রথম দেখা হয় ১৯৪৬ সালে ব্যারাকপুর কোন এক রবিবার, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে সেখেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার দুবছর পর ১৯৪৮ খ্রিঃ ৩০ শে জানুয়ারী দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভা গান্ধীজি এক আততায়ীর হাতে নিহত হন ।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং মাহাত্ম গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শন অনেক ক্ষেত্রে বেশ মিল থাকলেও সাহসিকতার দিক থেকে পরিস্থিতির বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনেক পরিপক্ক এবং যে কোন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে দূত্ব সব কিছু নিজের অনুকুলে নিয়ে আসতে পারতেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহিংস রাজনৈতিক মতাদর্শ বঙ্গবন্ধু বুকে ধারণ করে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি এবং প্রঙ্গা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতেন।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণী এব বঙ্গবন্ধু জুনিয়র নেতা হিসেব যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন করেন। তখন সারা পৃথিবী ব্যাপি সমাজতান্ত্রীক ধারার জয় জয়কার অবস্থা। বঙ্গবন্ধু উদার গণন্ত্রে বিশ্বাসী হলেও সমাজতান্ত্রীক অর্থনীতি এবং সমাজন্ত্রের প্রতি বিশেষ করে কালসবাদ নীতির প্রতি বেশ দূর্বলতা ছিল কিন্তু তিনি সব কিছুর মুলে মানব সেব মানব কল্যান এবং মানুষের বিশ্বাসই রাজনীতির মুল কথা বলে বিশ্বাস করতেন এবং যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানুষের মন সহজেই জয় করতে পারতেন। যে জন্য তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক ছোট ছোট ঘটনা গুলো অনেক বড় সফলতা এনে দিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্টে ভাসানী সাহেবের সাথে নির্বাচন করেছিলেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু একদিন খুলনা নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করতে যেয়ে দেখতে পেলেন কমনিস্টবাদীরা খুলনাতেও যুক্তফ্রন্টকে বয়কট করার জন্য উঠেপরে লেগেছে, সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকে তারা তাদের সাথে কোন একটা বিষয়ে আপোষ করতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আপোষ করতে রাজি না হওয়ায় খুলনার জনগন তার বিরূদ্ধে ক্ষেপে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু পরিস্থিতি বুঝে কমনিস্টবাদীদের বিপক্ষে বলে উঠলেন যারা মস্কোতে বৃস্টি হলে খুলনাতে ছাতা ধরে আমি তাদের সাথে কোন আপোষ করতে পারি না । এক কথা শুনার পর পুরা ময়দান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্লোগান দিতে লাগলেন।
যাহোক বঙ্গবন্ধু ১৯৪২ সাল থেকে বিশেষ করে কলকাতা যাওয়ার পর থেকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশ গ্রহন করেন এবং শের এ বাংলা এক ফজলুল হক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অন্যান্য সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদের দিক নির্দেশনা সব সময় অনুসরণ করতেন এবং কোন অবস্থাতেই নিজেকে সহিংস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতেন না । তিনি বহুবার বিভিন্ন বক্তিতায় বলেছেন আমি বাঙ্গালী আমি মুসলমান। তাঁর সক্রিয় রাজনীতির শুরু থেকেই বিশেষ করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যখন থেকে সক্রিয় ভুমিকা রাখা শুরু করেছিলেন তখন থেকে তিনি মুসলিম সংখাগরিষ্ঠতা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুসারে দেশ বিভাজনের নীতি বিশ্বাস করতেন এবং বাংলা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু ধর্ম নিরপেক্ষতা বিশ্বাস করলেও একজন ধর্ম প্রান মুসলমান হিসেবে তিনি ইসলাম ধর্মের মুল আদর্শ থেকে কখনই নিজেকে বিচ্যুৎ করেন নাই এবং তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কখনও কোন পরিস্থিতিতে অন্যের উপড় নিজের বিশ্বাস এবং মতাদর্শকে চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করেন নাই। যে কারণে তিনি তাঁর রাজনীতির শুরু থেকে একটা কথা সবসময় বলতেন কেউ যদি ন্যায্য কথা বলে, সে যদি একজনও হয় তার কথা বা মতামত গ্রহন করা হবে।
দেশ বিভাজনের পর বঙ্গবন্ধু সর্বদাই পাকিস্তান সরকারের সাথে ন্যায় নীতি আদর্শ এবং জনগনের মতামতের ভিত্তি পাকিস্তান সরকারের সাথে সহিংস নীতি পরিহার করে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে পূর্ববাংলা পরিচালনা করার চেস্টা করেছেন কিন্তু পাকিস্তান সরকার সর্বদাই জোর জুলুম এবং নির্যাতনের মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শেকে বাঙ্গালীদের উপড় চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু মহাত্মা গান্ধীর মত সহিংস রাজনীতি পছন্দ করতেন না এবং জনগনের আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করতেন তাই সর্বদাই তিনি তাঁর মতামতকে জনগনের মতামত যাচায়ের উপড় ছেড়ে দিতেন। যেমন ছয় দফা দাবীর জন্য পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা করল কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছয় দফাকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মেনুফেস্টোতে দিয়ে জনগনের ভোটের মাধ্যমে জনগনের দাবীতে পরিনত করলেন যা কিনা ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধার অন্যতম ভিত্তি হয়ে দেখা দিল। বাস্তবিক অর্থে বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ যিনি জনগনের অনুভূতি বুঝতেন এবং সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারতেন।
বঙ্গবন্ধু উদার মনের মানুষ হলেও মানুষকে চিনতে তিনি ভুল করতেন না তাইতো তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনী বয়ে নিজের অভিমত ব্যাক্ত করে লিখলেন – শহীদ সাহেব ছিলেন উদার, নীচতা ছিল না, দলমত দেখতেন না কোটারি করতে জানতেন না, গ্রুপ করার চেস্টাও করতেন না। তিনি শহীদ সাহেব সম্পর্কে লিখনে, উদারতা দরকার, কিন্তু নীচ অন্তঃকরণের ব্যক্তিদের সাথে উদারতা দেখাসে ভবিষ্যতে ভালর থেকে মন্দই বেশী হয়, দেশের ও জনগনের ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বল্লেন আমাদের বাঙলির মধ্যে দুটো দিক আছে। একটা হল আমরা মুসলমান এবং আরাকটা হল আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না । পরের শ্রীদেখে যে কাতর হয় তাকে পরশ্রীকাত বলা হয়। ঈর্ষা, দ্বেষ, সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা । ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্তেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা সফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি এমন উর্বর