শেখ মোঃ হুমায়ুন কবির, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংঙ্গালি স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র গর্ভধারিণী মা। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩’তম জন্মবার্ষিকী আজ।
১৯৩০ সালের ৮’ই আগস্ট। গোপালগঞ্জের অজপাড়া গাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুন্নেসা। বাবা শেখ জহুরুল হক এবং মা হোসনে আরা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন ফজিলাতুন্নেসা। মা বাবা আদর করে ডাকতেন রেণু।
বঙ্গমাতা’র পিতা, শেখ মোহাম্মদ জহুরুল হক যশোরে কো-অপারেটিভ ডিপার্টমেন্টে অডিটর পদে চাকরি করতেন। ৫ বছর বয়সী বড়মেয়ে জিন্নাতুন্নেছা এবং ২ বছর বয়সী ছোট মেয়ে ফজিলাতুন্নেছা, ডাকনাম রেণুকে রেখে বাবা শেখ মোহাম্মদ জহুরুল হক এবং পরে মাতা হোসনে আরা বেগম পরপারে পাড়ি জমান। তখন এই দুই নাবালিকা অনাথ মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পরে ৮০ বছরের বৃদ্ধ দাদা শেখ মোঃ আবুল কাসেমের ওপর। পিতৃমাতৃহারা হয়ে শিশু ফজিলাতুন্নেছা, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান আর মাতা সায়েরা খাতুনের আদরে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য ভাইবোনের সঙ্গে খেলার সাথী হয়ে বড় হয়েছেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩’তম জন্মবার্ষিকী’তে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা’র সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতির পিতা পরিষদ- ঢাকা মহানগর উত্তরের সফল সভাপতি, স্যাটেলাইট টেলিভিশন এশিয়ান টিভি’র এডভাইজার, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (বি,সি,পি,সি) কেন্দ্রীয় কমিটি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রাইম সাংবাদিক সংগঠন (কেন্দ্রীয় কমিটি’র) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, খান সেলিম রহমান।
বঙ্গমাতার ৯৩’তম জন্মবার্ষিকী’তে, বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে, খান সেলিম রহমান বলেন।
শৈশব থেকেই তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যোগ্য সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন মহীয়সী এই নারী। যে কারণে রাজনৈতিক জীবনে সফল হয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবা মাকে হারিয়ে দাদা, শেখ কাশেমের কাছে বড় হন তিনি। সাত বছর বয়সে দাদা মারা গেলে বঙ্গবন্ধুর মায়ের কাছে চলে আসেন ফজিলাতুন্নেসা। তারপর মাত্র ১৩ বছর বয়সে চাচাতো ভাই শেখ মুজিবের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সে থেকেই পাশে ছিলেন যোগ্য জীবনসঙ্গী হিসেবে।
শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে দলের নেতাকর্মীদের কখনোই বিভ্রান্ত হতে না দিয়ে সমস্যা সমাধান করতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর পেছনে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন মহীয়সী এই নারী।
একজন সাধারণ মানুষ থেকে বঙ্গবন্ধু যে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক, সেই পথ পরিক্রমা সম্ভব হয়েছে তাঁর জীবনে কিছু মানুষের সোনালি স্পর্শ ও অবদানের কারণে। আর এক্ষেত্রে যেসব মানুষের নাম করতে হবে, তাঁদের মধ্যে সবার আগে আসবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম। বঙ্গবন্ধুর এই সহধর্মিনী বিয়ের পর বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রতিটি সংগ্রামে তাঁর পাশে থেকে জুগিয়ে গিয়েছেন নিরন্তর সাহস ও অনুপ্রেরণা এবং করে গেছেন সহযোগিতা।
খান সেলিম রহমান আরো বলেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ১২ বছরই কাটাতে হয়েছে কারাগারে। তাঁর অনুপস্থিতিতে নিজের পরিবারের হাল ধরা, দলীয় নেতাকর্মীদের পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো কাজগুলো বঙ্গমাতা করে গিয়েছেন হাসিমুখেই। এর পাশাপাশি কিছু দারুণ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি সুযোগ্য পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে।
পূর্ব পাকিস্তানের রাজপথ বিক্ষোভে পরিণত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেও গ্রেফতারের হুমকি দেয়। আন্দোলনের তীব্রতায় পিছু হটে সরকার। পাকিস্তান সরকার এ সময় লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্যারোলে মুক্তির সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে জোরালো আপত্তি জানান। পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে প্যারোলে নয়; নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।
শেখ মুজিবের ব্যাপারে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ। পাকিস্তান সরকার বাধ্য হবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে। ফজিলাতুন্নেছার পরামর্শে অনড় থাকেন শেখ মুজিব। প্যারোলে মুক্তির ক্ষেত্রে অসম্মতি প্রকাশ করেন তিনি। ইতোমধ্যে শেখ মুজিবের মুক্তি আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি লাভ করেন। পরদিন অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালি তাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে বরণ করে নেয়।
বঙ্গমাতার অপর অনন্যসাধারণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। আমরা জেনেছি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যে বঙ্গমাতার সঠিক পরামর্শ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে সেই সময় তাঁর সহচররা ৭ মার্চের ভাষণের ব্যাপারে নানা পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। বঙ্গমাতা এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে যা মন থেকে বলতে ইচ্ছে করে, যা বলা উচিত, তা-ই বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। “এবারের সংগ্রাম—আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম—স্বাধীনতার সংগ্রাম” বলে বঙ্গবন্ধুর সেদিনের স্বাধীনতার ডাকে বঙ্গমাতার মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন বঙ্গবন্ধুকে সাহস জুগিয়েছিলেন।
খান সেলিম রহমান আরো বলেন।
একজন যোগ্য জীবনসঙ্গীর উদাহরণ তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫’ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহ একই সঙ্গে শহীদ হন তাঁরা। আর তাই ইতিহাসের পাতায় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নাম অমোচনীয়।
আজ ০৮’ই আগষ্ট ২০২২, মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩’তম জন্মবার্ষিকী’তে জানাই, বিনম্র শ্রদ্ধা।