জহিরুল হক জহির স্টাফ রিপোর্টার:- গ্রামীন জনপথে ৩০ বছর ভিক্ষা করে মানুষ করা সন্তানদের অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার ৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধ মা। এখনো ভিক্ষুক মায়ের প্রতিদিন ভিক্ষা না পেলে অনাহারে কাটে দিন রাত। সব মায়ের কাছেই সন্তান তার বুকের ধন অমূল্য সম্পদ। সন্তান নিয়ে সব মায়েরই থাকে হাজারো স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে সন্তানদের বড় করলেও ভিক্ষুক রওশনারার সেই স্বপ্ন জীবনের শেষ প্রান্তে স্বপ্নই রয়ে গেল। সন্তান আমার বড় হবে মুছে যাবে জীবনের দুঃখ-কষ্ট। কিন্তু ভিক্ষুক রওশনারার জীবনে দুঃখ ঘুচেনি আরো যোগ হয়েছে ভিক্ষা করে বড় করা সন্তানের হাতের মারধর।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়নের হীরাধার গ্রামের মমিন উদ্দিন হাওলাদার মারা যাওয়ার পর ৩০ বছর ভিক্ষা করেই ১ ছেলে এবং ১ মেয়েকে বড় করেছেন রওশনারা বেগম। ছেলে খালেক হাওলাদার পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। খালেক স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্য ঘরে বসবাস করলেও বৃদ্ধ মায়ের খোঁজখবর নিচ্ছেন না। ৭০ বছর বয়সে হাঁটা চলার মত শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন রওশনারা বেগম। এক মাত্র মেয়ে সেলিনাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন সে হাল ধরেছে স্বামীর সংসারের মায়ের খবর নিচ্ছে না। ছেলে খালেক এর কাছে দুমুঠো ভাতের জন্য গেলেও মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। প্রতিদিন প্রতিবেশীর দেয়া দু’মুঠো ভাতেই ক্ষুধা নিবারণ করছেন রওশনারা বেগম।
স্থানীয়রা জানান, সারা জীবন শ্রমদিয়ে আর কষ্ট করে সংসার আগলে রেখেছিলেন রওশনারা বেগম। কিন্তু জীবনে একটু সুখও পাননি। শুধু পেয়েছেন লাঞ্চনা আর বঞ্চনা। জীবনের শেষ সময়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বৃদ্ধা মা। ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন খোঁজ খবর রাখেন না মায়ের। ছেলে খালেকের কাছে সহযোগিতার জন্য গেলেও মারধর করে তাকে ফেলে রাখেন ঝুপড়ির ঘরে। রওশনারা বেগম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৃদ্ধ মায়ের বাস্তব জীবনের এমন গল্প যেন সইবার না উপস্থিত স্থানীয় লোকজন অনেকে এমন মন্তব্য করছিলেন রওশনারা বেগমের জীবন কাহিনী বলতে গিয়ে।
২৮ নভেম্বর রওশনারা বেগমের গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, স্বামীর রেখে যাওয়া ঝুপড়ির ঘরের মধ্যে খুদা ও চিকিৎসার অভাবে শারীরিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ঝুপড়ি ঘরটিতে নেই দরজা জানালা, উপরে রয়েছে টিনের একটি ছাউনি। চারপাশে ভাঙ্গা টিনের বেরা। মেঝেতে নেই বিছানা। মৃত্যুর আগেই তার দিনরাত কাটছে মাটির উপরে। রওশনারা বেগম জানান, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি নিমিষে প্রবেশ করে তার ঘরে। এখন শীতের ঠান্ডা কনকনে হাওয়া প্রবেশ করে তার ঘরে। নেই শীতের কাপড়। নেই কম্বল কাঁথা বিছানা। নেই ঘরে খাওয়ার মত চাল ডাল। তার এমন দূর অবস্থায় নিজের সন্তানেরাই তার খবর নিচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার চেয়ারম্যানেরা আমার মত একটা মানুষকে খাবার দিতেও পারছে না। তাহলে মেম্বার চেয়ারম্যানের বা কি দরকার। কান্না জড়িত কন্ঠে তিরি আরো বলেন ৩০ বছর ভিক্ষা করে সন্তানদের বড় করেছিলাম। আজ তারা আমার খবর নিচ্ছে না। আমাকে ফেলে রেখেছে। বয়স বাড়ায় রোগে বাসা বেঁধেছে শরীরে। তবুও অসুস্থ শরীরে প্রতিবেশীদের থেকে দু’মুঠো ভাত ভিক্ষা পেয়েই নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। রওশনারা বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন।