মিরপুর প্রতিনিধি সুমন খান: রাজধানীর মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের কার্যালয়ে চলছে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি? এমনটাই অভিযোগ ভুয়া কার্ডধারী সাংবাদিক ও দালালদের বিরুদ্ধে।
একটি রাষ্ট্র ও সমাজের অন্যতম সম্মানজনক পেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা। তাই সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের অতন্দ্র প্রহরী, কিংবা সমাজের দর্পন হিসেবে পরিচিত সাংবাদিতা পেশাটি যেমন মহান তেমন অত্যন্ত দায়িত্বশীলও, এই পেশার কাজে কিছু ঝুঁকি থাকলেও মজাও কিন্তু কম নয়। ফলে হাজার পেশার ভিড়ে এই পেশাটি একজন ব্যক্তির আলাদা বক্তিত্ব প্রকাশ করে থাকে। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা গেছে দেশজুড়ে যেমনি নামে-বেনামে ভিজিটিং কার্ডধারী সাংবাদিকদের অবাদ বিচরন শুরু হয়েছে। তেমনি করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করেই ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা অধিকাংশ নিউজ পোর্টালসহ শুধুমাত্র নামসর্বস্ব ই-পেপার পত্রিকার ভিজিটিং কার্ড ও আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ব্যবহার করার ফলে গাজীপুরে সরকারী শায়ত্ব-শাষিত, অফিস আদালত গুলোতে ভিজিটিং কার্ডধারী ভূয়া সাংবাদিকদের অবাদ বিচরনে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীগন। ভুয়া নানা পদ উল্লেখিত করে ব্যক্তিগত ভিজিটিং কার্ড গাজীপুরের বিভিন্ন সরকারী দফতরের টেবিলে-টেবিলে বিতরণ করে দিনের পর দিন, সাপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক শ্রেণীর কথিত সাংবাদিকরা। তারা ভিজিটিং কার্ড
ব্যবহার করে অভিনব ভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে একের পর এক। প্রতারণার অপকৌশলের জন্যে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন নানা পদ-পত্রিকা উল্লেখিত ভিজেটিং কার্ড। সাংবাদিক পরিচয়ের জন্য নিজেকে জাহির করছেন বিভিন্ন অনলাইন, স্টাফ রিপোর্টারসহ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে। সে পত্রিকা আদৌ প্রকাশ হয় কিনা জানেন না কেউ। ১৫ অক্টোবর রবিবার সকালে মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন কথিত কয়েকজন নামধারী সাংবাদিক , তারা নাকি একটা পেজ খুলে এবং নিউজ পোর্টালে তারা নাকি সম্পাদক ও প্রকাশক বিআরটিএ প্রতিটি রুম থেকে প্রতিদিন এবং সপ্তাহে এক হাজার কিংবা দুই হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা । ডোকা মাত্রই সেবা নিতে আসা গ্রহকদের জোরপূর্বক শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে কর্মকর্তাদের উক্ত ভিডিও দেখিয়ে টাকা দাবী করেন আর শুধু কেউ নয় তারা হলো মিরপুরের বিআরটিএ পিছনে এবং সামনে থাকা সাংবাদিকের নামে অপসংবাদিক গন করেই যাচ্ছেন । মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শুধু রাজধানী মিরপুর জোন থেকে নয়, জোনের বাইরে থেকেও ঢাকা, উত্তরা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও নারায়নগঞ্জ থেকে তারা প্রতিনিয়ত আমাদের অফিসে এসে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবী করছেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখান। অফিসে ডুকে তাদের এহেন কর্মকান্ডে ভয়ে তটস্থ হয়ে কয়েকজন কর্মচারী অফিস ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় কে পেশাদার সাংবাদিক, কে ভুয়া সাংবাদিক, তা নিয়ে আমাদের বিপাকে পড়তে হয়। এখনই সময় মিরপুর পেশাদার প্রকৃত সাংবাদিকরা ঐক্য বদ্ধ হয়ে এদের প্রতিহত করুন। তা না হলে দিনের পর দিন এরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এরপর গারদখানার ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাংবাদিক পরিচয়ে বাহারি হরেক রকমের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি পরিচয়ে জাহির করে অহেতুক ভিডিও ধারণ করছে। অতপরঃ উক্ত কর্মকর্তাদের ফেসবুকে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকাও দাবী করছে। চাহিদামত দাবীকৃত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সংবাদ প্রকাশের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন কথিত কয়েকজন সাংবাদিক। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এরা অহেতুক এখানে প্রবেশ ভুলবাল ভিডিও ধারনের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবী করছে। টাকা না দেওয়ায় সংবাদ প্রকাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। তাদের কর্মকান্ডে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথিরিটি বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস গাজীপুর, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস গাজীপুর, গারদখানা, এসিল্যান্ড অফিস, ভূমি অফিসসহ অন্যান্য সরকারী অফিসগুলোতে একশ্রেনীর ভিজিটিং কার্ডধারী সাংবাদিকদের অবাদ বিচরন লক্ষ্য করা গেছে। উদ্দেশ্যে একটাই নামমাত্র ভিডিও ও ছবি তোলার ভাবভঙ্গি দেখিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী। এইসব কার্ডধারী ভুয়া সাংবাদিকদের আচরনএমন যে তাদের সাধারণ মানুষ সহজে ধরতে পারেন না। এমনকি পেশাদার সাংবাদিকরাও তাদের দেখে মাঝে মধ্যে বিভ্রান্ত হন। শুধু সরকারী অফিসগুলোতে নয়, খোঁজ নিয়ে জানা যায় পুরো গাজীপুর জেলা জুড়ে এ ধরনের ভিজিটিং কার্ডে ভুয়া পদ পদবী ব্যবহার করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে এ চক্রটি। আরো অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ভিজিটিং কার্ডধারী সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত জেলার কোন না কোন উপজেলা গিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন। কখনো বাল্য বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে কনে পক্ষের বাড়িতে হানা, কখনো গ্রাম্য কবিরাজ, ড্রেজার, স্ব-মিল, বেকারী, ঔষুধের দোকানসহ গ্রামের অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে আইনী সহায়তার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। গণহারে বেড়ে যাওয়া লেবা-সধারী এসব লোকেরা রাস্তায় বাহির হলেই বীরদর্পে অকপটে পরিচয় দেয়। আমিও সাংবাদিক। যার ফলে সাধারন মানুষ সংবাদ কর্মীদের এখন উপহাস করে অকপটে বলে ফেলেন ঐ যে দেখ সাংঘাতিক। তাছাড়া এসব কথিত সাংবাদিকদের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কথিত এসব সাংবাদিকদের কারনে দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ প্রাপ্ত সাধারন মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন প্রকৃত সাংবাদিকরা এখন কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে দেখা যায় তাদের পত্রিকার কোনো নিউজ ভ্যাল্যু আছে কি না, সেসব ভেবে দেখার ফুসরৎ তাদের নেই। তাদের দরকার নিজেদের প্রতাপ দেখিয়ে, আতংক ছড়িয়ে টুপাইস কামিয়ে নেয়া। টাকা পকেটে না আসা পর্যন্ত চিল্লাপাল্লা, হুমকি, ভীতি প্রদর্শনের সব কান্ডই ঘটিয়ে থাকেন।