রিয়াদুল মামুন সোহাগঃ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মেঘনা নদীর মোহনা দখল করে অবৈধ খসকি জাল বসানোকে কেন্দ্র করে গোলাগুলিতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।এদের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।এঘটনায় আরো তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় চিকিৎসারত রয়েছেন।
গত বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর)সন্ধ্যা সাতটায় সন্দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে কালিরচরে দখলদার দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ঘটে।সংঘর্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা মৎস কর্মকর্তাসহ কোস্টগার্ডের সারিকাইত কন্টিনজেন্টের দুই সদস্য আহত হয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান,বুধবার কোস্টগার্ডকে সাথে নিয়ে নিয়মিত অভিযানে যাই।আমরা ভাসান চরের কাছাকাছি আলাউদ্দিন মাঝির খসকি জালের কিছু খুটি কাটার সময় শ্রমিকরা বাধা দেয়।সেখান থেকে চলে আসার পথে সন্ধ্যার সময় ভাটায় আমাদের বোট কালির চরে আটকে যায়।এর কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের সামনে থেকে একটি এবং পিছন থেকে একটি পক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
কোস্টগার্ড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তার আমাদের উপর সশস্ত্র হামলা করে।একপর্যায়ে আত্মরক্ষা করতে কোস্টগার্ড উপরের দিকে ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পিছু হটে।পরে সেখানে আহত অবস্থায় চারজনকে দেখতে পেয়ে চিকিৎসার জন্য সন্দ্বীপ নিয়ে আসি।সন্দ্বীপ আসার পথে দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আফাজিয়া বাজারের মৃত নাছির উদ্দিনের পুত্র আবদুর রহমান(৩০),তার চাচাতো ভাই রাজু ও রেনু বাজারের মোস্তাফার পুত্র ইসমাইল।তারা সবাই নোয়াখালীর আলাউদ্দিন মাঝির খসকি জালের শ্রমিক।
কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মিডিয়া অফিসার লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান জানান,চর দখল করে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে কোস্টগার্ডের কাছে এমন একটি তথ্য আসে। কোস্টগার্ড মৎস কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।পরে সেখানে দু’চার জনকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মানবিক কারণে তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো জানান,চরঘেরা জাল তুলে ফেলার জন্যই গতকাল মৎস কর্মকর্তাসহ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।কোস্টগার্ড সদস্যদের আহতদের বিষয়ে জানান,রাতের বেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় তারা কোস্টগার্ডের উপর আক্রমনাত্মক ছিল।সেসময় দুজন সদস্য একটু আহত হয়।
সন্দ্বীপ গাছুয়া সরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,বুধবার রাত দুইটায় দুইজন মৃত ও দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাছুয়া সরকারি হাসপাতালে আনা হয়।আহতদের পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গাছুয়া সরকারি হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.কারিমুল মাওলা মিনহাজ বলেন, হাসপাতালে আহত দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সাথে সাথে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।বাকি দুইজনকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই।এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরো দুজনকে উদ্ধার করে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সুবর্ণচর উপজেলার মাইন উদ্দিন মাঝি ও অলি মাঝি হাতিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর সন্দ্বীপ কূলবর্তী এলাকায় সন্দ্বীপের স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে কমিশনের ভিত্তিতে বন বিভাগের লাগানো কেওড়া গাছ কেটে খুটি বানিয়ে সেগুলো পুতে খসকি দিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে মাছ শিকার করে আসছেন।কিছু দিন আগে এই খোপ দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়।ভাসানচরের পাশের অবৈধ খসকি ও চরঘেরা জালে প্রতিবছর সাধারণ জেলেদের নৌকা ও মাছ ধরার জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এগুলো উচ্ছেদের জন্য গত কয়েক বছর ধরে সন্দ্বীপের সারিকাইত বাংলাবাজার ও গাছতলীর হাট থেকে ইজারাদারদের লোকজন শ্রমিক হিসেবে গিয়ে এসব অবৈধ জাল উচ্ছেদ করে।অনেক সময় ঘাট ইজারাদার ও জেলেদের সাথে খসকি শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়।গতকাল ঘাট থেকে লোকজন সহ আলাউদ্দিন মাঝির অবৈধ খসকি জাল অবৈধ মৎস কর্মকর্তা কোস্টগার্ড ও জাল কাটার জন্য শ্রমিক নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য,গত বছর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে সারিকাইত গাছ তলীর হাট দুর্গা চরণ ঘাটে কোস্টগার্ড অভিযান চালালে কোস্টগার্ড ও মৎস অফিসের লোকজনের উপর স্থানীয় ইজারাদারের লোকজন হামলা চালায়।