দূর্গাপুর ( রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
মোঃ ইসমাইল হোসেন নবী
রাজশাহীর দুর্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা হোজা নদীটি এখন যেন মরা খাল। ময়লা-আবর্জনায় একদিকে নদীটি যেমন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে অন্যদিকে দখলদারদের কবলে পড়ে দিনদিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, নদীটি দ্রুত সংস্কার করা হোক। এতে প্রাণ ফিরে পাবে হোজা। রাজশাহীর দুর্গাপুর, বাগমারা ও পুঠিয়া এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় অবদান রাখবে।
হোজা নদীর দৈর্ঘ্য ১৯৫ দশমিক শূন্য ৩ বর্গ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ২৪ দশমিক ২৩ মিটার। ভৌগলিকভাবে নদীটি দেখতে অনেকটা আঁকাবাঁকা আকৃতির। এটি দুর্গাপুরের পলাশবাড়ী গ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্বমুখ পথে তিন কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে দুর্গাপুর পৌর ও পুঠিয়ার কানাইপাড়া দিয়ে মুসা খান নদীতে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, হোজা নদীপথে তাহেরপুর, আহসানগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ ও মাদারীগঞ্জ থেকে মালামাল জেলা সদরের নওহাটায় যেত। সেখান থেকে মালামাল পৌঁছে যেত রাজশাহী মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে। তবে আশির দশক থেকে নদীটি ভরাট হওয়া শুরু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের এ নৌপথটি বন্ধ হয়ে যায়। দুই পাড় দখল শুরু হলে দিন দিন নদীটি সরু খালে পরিণত হয়। সময় পরিক্রমায় নদীর পুরোটাই এখন বর্জ্য ও ময়লায় ভাগাড় হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে গেছে এককালের গভীর ও খরস্রোতা হোজা। বর্ষাকাল ছাড়া এ নদীতে পানির দেখা মেলে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, আশপাশের এলাকার সব বর্জ্য নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে এ নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ ও নদীর পানি। নদীতে বাড়ছে দূষণ। এককালে এ নদীর পানিতে লোকজন গোসল করতেন। গৃহস্থালীর কাজে পানি ব্যবহার করতেন। ছেঁউতিতে পানি সেচ দিয়ে আশপাশের জমিতে ফসল ফলানো হতো। সেই নদীর পাড় এলাকায় বসবাসকারী এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা জায়গা দখল করে গড়ে তুলছেন মার্কেট, দোকান ও ঘরবাড়ি।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার সিংগাবাজারে ব্রিজের দুপাশেই প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন দোকানপাট ও মার্কেট। ব্রিজের পশ্চিম পাশের মেরিন অটো ফ্লাওয়ার মিলের পেছনে হোজা নদীর ওপর চলছে বাঁশের আড়তের রমরমা ব্যবসা। নদীটির এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দখলদারদের থাবা পড়েনি। কিন্তু কিছু অজ্ঞাত কারণে এই সমাধান কখনোই ঘটেনি বিগত সরকারের আমলে।
বেশ কয়েকবার এবিষয়ে নিউজ এবং উপজেলা নির্বাহী বরাবর নদী দখল মুক্ত ও খননের জন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন স্মারক লিপি দিলেও কোন পরিবর্তন হয় নাই।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন করে নদী ভরাট ও খাল খনন শুরু করায় দুর্গাপুর বাসীর মনে আসার আলো উন্মোচিত হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও প্রশাসক দুর্গাপুর পৌরসভা সাবরিনা শারমিন জানান, সি আর ডি পি-৩ এর আওতায় পৌরসভা থেকে হোজা নদীর ৩৩০০ মিটার অংশ খুব শীঘ্রই সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত এর কাজ শুরু হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য অপসারণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে উপজেলার কয়েকটি স্থানে ডাস্টবিন তৈরি করে দিয়েছে।