ডলার না কিনলেও মাত্র পাঁচ থেকে ছয়শত টাকা দিলেই মিলছে অবৈধ ও ভুয়া ডলার এন্ডোর্সমেন্ট এর সার্টিফিকেট, এমন অভিযোগের তীর এখন “সোসাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ” রাজশাহী শাখা’র দিকে। এমন অবৈধ ডলার এন্ডোর্সমেন্টের কারনে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে প্রযুক্তির দোহায় আর সময়ের অযুহাত দিয়ে নাটকীয় মঞ্চ তৈরি করছে রাজশাহীতে কর্মরত ভিসা কর্মকর্তারা। বৈধ-অবৈধ ডলার এন্ডোর্সমেন্টের সার্টিফিকেট জমা নেওয়ার নিয়ম আছে, এমন তথ্য জানালেন খোঁদ “ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টার” ঠাকুরগাঁ’ র ইনচার্জ ঐশীনি কুমার বর্মন। এমন তথ্য পাওয়ার পর গভীর অনুসন্ধান শুরু করে মিডিয়াকর্মীরা। তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, এই ভিসা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত খোঁদ “ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টার” (IVAC) রাজশাহীর ইনচার্জ সুমন দাস সহ অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে ঠাকুরগাঁ IVAC ইনচার্জ ঐশীনি কুমার বর্মন বলেন, আমার এখানে কোন সমস্যা নাই। কিছুদিন যাবত ভিসা অফিস নিয়ে নিউজ ও অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্ন করলে, তিনি সেই অভিযোগের তীর ঘুরিয়ে দেন রংপুর অফিসের দিকে। তিনি বলেন এই অবৈধ কাজগুলো করছে রংপুর অফিস। পরে রংপুর অফিসের IVAC ইনচার্জ ওমর কুমার রায় এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি নানা ব্যাস্ততার অযুহাত দেখান এবং পরে ফোন দেন, বলে কেটে দেন। নাছড়বান্দা মিডিয়া কর্মী আবারও ফোন দেন এবং ভিসা অফিসের দুর্নীতি ও ভুয়া ডলার এন্ডোর্সমেন্টের বিষয়ে জানতে চান। এমন প্রশ্ন করতেই, তিনি সকল অভিযোগকে অস্বিকার করেন। আপনার দপ্তরের ভিসা এক্সিকিউটিভ অফিসার সবিতা রানি রায় ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সার্টিফিকেট সঠিকটা বাতিল করে ভুয়া কাজগ জমা নিয়েছেন এবং সাধারণদের হয়রানি করছেন এমন প্রশ্ন করতেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আবারও ফোন দিলে তিনি একটু বিরক্তিকন্ঠে বলেন, এখানে উর্ধ্বতনের নির্দেশনা ছাড়া কোন কিছু হয়না! তার এমন বক্তব্য পুরো মিডিয়া পাড়ায় যেন দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও জেলায় বেশ কয়েকটি ভিসা সিন্ডিকেট
রয়েছে। রংপুরের সবচেয়ে বড় ভিসা সিন্ডিকেট “আইসিটি ফোরাম মাহিগঞ্জ রংপুর” নামক একটি মালিক সমিতি। এই সমিতির বাইরে কোন ভিসা করার জো নাই বললেই চলে, এমন অভিযোগ শত শত ভুক্তভুগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অনলাইন ব্যবসায়ী ও ভিসা করতে আসা সাধারণ মানুষ বলেন, আইসিটি ফোরামের বর্তমান সভাপতি সাহাদত হোসেন লিখনের তকমা ছাড়া ভিসা এ্যাপ্লিকেশন জমা হয়না। কারন ভিসা অফিসারের সাথে সমিতি সভাপতি লিখনের যোগসাজশ রয়েছে। এই জন্য বাইরের অন্যকোন ব্যাংক থেকে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করলেই হতে হচ্ছে হয়রানি। অভিযোগের বিষয়ে সিন্ডিকেট নেতা লিখনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমরা জঙ্গি হামলা থেকে এই অফিসকে সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া অনেক অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করি। আগে রাজশাহীর কোন ব্যাংক থেকে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করলে সমস্যা হতো, তাই আমরা এখান থেকে নিজেরা করি। পরে তিনি দলীয় পদ উল্লেখ না করে সরকার দলের সুবিধা পাওয়ার কথাও স্বিকার করেন। যেহেতু পুরো উত্তরবঙ্গের ভিসার বিভাগীয় কার্যালয় রাজশাহীতে তাই উর্ধ্বতন বলতে রাজশাহী দপ্তরকে বোঝানো হয়েছে। এদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন ভিসা এজেন্টদের সাথে কথা বললে, তারা একজনের দিকেই ইশারা করছে। সে অন্য কেউ নয় IVAC ইনচার্জ সুমন দাস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভিসা পাসপোর্ট ব্যবসায়ীরা বলছে, এখানে সুমন দাসের কয়েকটি ব্যক্তিগত সিন্ডিকেট রয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়ার মানিক শর্মা ও চাপাই এর হারাধন অন্যতম। শত শত লোক লাইনে দাড়িয়ে থাকলেও সুমন দাসের নির্দেশ ও ইশারাতে ভিতরে ঢুকে পড়ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। যে সদস্য যায় তাদের হাতে থাকে ১৫-২০ টা পাসপোর্ট বই। তাদের লেনদেনও হয় বিকাশ, রকেট বা নগদ সিস্টেমে। তারা (ভিসা এজেন্ট) বলছে ইন্ডিয়ান সহকারি হাই কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটি বিদায় নেয়ার পর এই সিন্ডিকেটগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, যেখানে নিয়ম রয়েছে পাসপোর্ট বই মালিক ছাড়া বই দেওয়া যাবেনা, সেখানে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বই পার করছেন সুমন দাস। এই সুমন দাস চলতি মাসের ৫ তারিখে ১৮৭ নং টোকেনের বই বের করে দেন দাদালের হাতে। যার সুনির্দিষ্ট প্রমান রয়েছে মিডিয়ার হাতে। এবিষয়ে রাজশাহীতে দ্বায়িত্বরত IVAC ইনচার্জ সুমন দাসের সাথে কথা বললে গেলে তিনি বলেন এখানে মিডিয়া এলাও নাই বলেই তিনি অফিস থেকে সরে যান। তার ব্যক্তিগত ০১৭৪৬৮৫০৩০৭ নাম্বারে বার বার যোগাযোগ করেও ব্যার্থ হয়েছে সাংবাদিকরা।
পরে সোসাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ রাজশাহী শাখায় গিয়ে সাক্ষাৎ করলে, সেখানেই সাক্ষাৎ মিলে যোনাল প্রধান সারওয়ার খান এর সাথে। ম্যানেজরের পরিবর্তে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং অনিয়মের বিষয়কে অস্বিকার করেন। তিনি বলেন আমাদের কাগজ কলমে সব ঠিক আছে। তাকে একটি ডলার বিহীন এন্ডোর্সমেন্টের কপি প্রমান দিলেও তিনি মানতে রাজি নন। যোনাল প্রধানকে বলা হয়, আপনি এখন ফোন দিলে জানতে পারবেন এই বই মালিক ডলার কিনেছেন কিনা।
পরে যোনাল প্রধান বলেন আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ আছে, এগুলো চেক করে দেখবো তারা (ডলার গ্রাহক) ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিয়েছে কিনা। যদি ঘটনার সত্যতা মিলে অবশ্যই আমাদের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিঃদ্রঃ আগামী পর্বে থাকছে সুমন দাসের নানা অনিয়ম ও লোমহর্ষক ঘটনা, পাসপোর্ট মালিক ছাড়াই কিভাবে দাদালদের মাধ্যমে ভিসা দিচ্ছেন !!!