রাজশাহী মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকী ও চাঁদা আদায়ের অপরাধে প্রতারক চক্রের নারী-সহ ৬ সদস্যকে আটক করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্য হতে নগদ আড়াই হাজার টাকা, ১ টি চাকু ও ছিনিয়ে নেয়া ১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো মো: সিহাবুল ইসলাম শিলু (২১) ও তার স্ত্রী মোসা: আসমা আফিয়া ওরফে অহনা ওরফে অধরা (২১), মো: স্বাধীন (২১), সাগর আলী (২২), মেহেদী হাসান মিম (২১) এবং মোসা: প্রিয়া আক্তার মায়া ওরফে টুসু (১৯)।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মো: ইকবালের (ছদ্মনাম) প্রায় ৪-৫ মাস পূর্বে অহনা নামের একটি মেয়ের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মোবাইলে ও ম্যাসেঞ্জারে তাদের কথা হতো। কিছু দিন পর অহনার সাথে ইকবালের নগরীর হাসপাতাল বন্ধ গেটে দেখা হয়। সেখানে অহনার বান্ধবী মায়ার সাথেও তার পরিচয় হয়।
গত ২০ জুলাই ২০২২ অহনা তার বান্ধবী মায়ার মোবাইল ফোন হতে ইকবালকে চন্দ্রিমা থানার শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দেখার করার জন্য আসতে বলে। ইকবাল সরল বিশ্বাসে রাত সাড়ে ৯ টায় শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসে। সেখানে অহনা ও তার বান্ধবী মায়ার সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে কথা বলার সময় আসামিরা হাতে লোহার রড, জিআই পাইপ, চাকু ইত্যাদি নিয়ে ইকবালকে ঘিরে ফেলে এবং জোরপূর্বক স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়।
সেখানে এলোপাথাড়ি চার-থাপ্পড়, কিলঘুসি মারে এবং চাকুর ভয় দেখিয়ে তার পকেটে থাকা নগদ ৩৭ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তার নগ্ন ছবি উঠিয়ে মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে বিকাশ, রকেট ও নগদের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। এছাড়াও মুক্তিপণ বাবদ আরও ৫ লক্ষ টাকার জন্য পরিবারের লোককে বলার জন্য চাপ দিলে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয় এবং আসামিরা নিজেরাই সে টাকা উঠিয়ে নেয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
পরবর্তীতে ইকবাল ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে অভিযোগ প্রদান করেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: আরেফিন জুয়েলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো: আশিক ইকবাল, এসআই মো: শাকিল হুদা জনি ও তার টিম আসামিদের নাম ঠিকানা ও অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযানে নামে।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান নির্ণয় করে গতকাল ২৪ জুলাই ২০২২ রাতে নগরীর বোয়ালিয়া থানার মধুরডাঙ্গা ও চন্দ্রিমা থানার আসাম কলোনী বৌ-বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করে এবং একজন পালিয়ে যায়। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্য হতে নগদ আড়াই হাজার টাকা, ১ টি চাকু ও ছিনিয়ে নেয়া ১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।