রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এবার পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার রাতে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের এসআই আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জি জানান। তিনি বলেন, মামলায় অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বক্স ও মোটরসাইকেলে আগুন এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। মামলার পর তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের বাসের চেইন মাস্টার। নগরীর খোজাপুর এলাকায় তার বাসা। গ্রেপ্তারের কথা জানান মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান। এদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেলে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি পুলিশ বক্স ও অন্তত ৩০টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ জন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন এক শিক্ষার্থী। ছয়জন শিক্ষার্থীর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক বাসচালকের ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির সূত্র ধরে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনা তদন্তে উপ উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান। প্রক্টর বলেন, “আহত ছাত্রদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তারা যে সব দাবি দিয়েছে তা পালনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর আন্দোলনে হওয়ার কথা নয়।” এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় রাবি প্রশাসনের মামলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে অবস্থান নিয়েছে। উপ-পুলিশ কমিশনার বিভূতি ভূষণ বলেন, “ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। তারা যদি আন্দোলনে না নামে তা হলে রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। তবে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে আছে।”