বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

শিক্ষক বড় ভাইকে সভাপতি করা, গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর উপজেলা দামু ডাঙ্গা মাদ্রাসা সুপারের যত অনিয়ম স্বজনপ্রীতি

রানা ইস্কান্দার রহমান
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২
  • ১৫৪ বার পঠিত

গাইবান্ধা জেলা ব্যুরো প্রধানঃ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামুডাঙ্গা আর্দশ দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুস সাত্তার আকন্দের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের পর এবার তিনি ম্যানেজিং কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি আপন বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকারকে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিধিমালা উপেক্ষা করে শিক্ষক সত্বেও গোপন আতাঁতে সুপার তার আপন বড় ভাই আব্দুল মতিনকে সভাপতির পদে বসান। আব্দুল মতিন কিশামত খেজু জি, এম, বি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার (শিক্ষক)। এছাড়া স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এরআগেও মাদ্রাসায় ভাবি আব্দুল মতিনের স্ত্রী ও অপর বড় ভাই আব্দুল মোন্নাফকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সুপারের বিরুদ্ধে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারী সাদুল্লাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম মাহাবুবুল আলমের যোগসাজসে এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ ঘটনা জানাজানির পর থেকেই অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পরে এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড, জেলা-উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। গত ৬ মার্চ অভিযোগটি করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এ্যাডভোকেট মো. জহুরুল ইসলাম মন্ডল।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী মাদ্রাসার কমিটির সভাপতি পদে সুপার আব্দুস সাত্তার তার আপন বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকারকে মনোনীত করেন। অথচ তিনি একটি মাদ্রাসার সহকারী সুপার শিক্ষক। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধিমালা ও প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, কোন শিক্ষক ম্যানেজিং/গর্ভনিং বডির সভাপতি নির্বাচিত বা মনোনীত হইতে পারবেন না। বিষয়টি তাক্ষণিক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও তাতে কর্নপাত না করে আব্দুল মতিনকে সভাপতি মনোনীত করা হয়। সুপার আব্দুস সাত্তার ও তার বড় ভাই আব্দুল মতিন ইউনিয়ন জামায়াতের সক্রিয় সদস্য বটে। তারা মাদ্রাসাটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিনিত এবং ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জহুরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘মাদ্রাসার সুপার গোপন আতাঁতে নীতিমালা উপেক্ষা করে আপন ভাইকে কমিটির সভাপতির পদে বসান। মূলত সুপার শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ মাদ্রাসাটিতে পারিবারিক সিন্ডিকেট তৈরী করছেন। এতে প্রতিবছর শিক্ষার্থী কমে যাওয়াসহ এর প্রভাব পড়ছে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থায়। দুর্নীতি-হরিলুটে যোগসাজসী এই কমিটি বাতিল করাসহ জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে, সুপার বড় ভাইকে মাদ্রাসা কমিটি সভাপতি করার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, সুপার স্বজনপ্রীতি করে ভাই-ভাবীকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। এছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী অনেকেই সুপারের আত্মীয়। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে সুপারের বাণিজ্য করাসহ অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনাও দৃশ্যত আছে। যদিও প্রতিষ্ঠার পর মাদ্রাসায় তেমন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। এমনকি বিভিন্ন সময়ে আসা বরাদ্দ-অনুদানের টাকাও ব্যয় করা হয়নি উন্নয়নে। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও উপবৃত্তির তালিকাতেও নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে সুপারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এটিএম মাহাবুবুল আলম মুঠফোনে বলেন, ‘কমিটি গঠনের দিন মাদ্রাসার নয় সদস্যের গোপন ভোটে সভাপতি মনোনীত হয়। তবে সভাপতি নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা দ্রুতই তদন্ত করা হবে। বিধিমালার ব্যতয় কিংবা কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে কমিটি বাতিল করা হবে।’
জানতে চাইলে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, ‘ওই মাদ্রাসার সভাপতি-সুপারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত সুপার আব্দুস সাত্তার আকন্দকে। এমনকি তার মুঠফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991