বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ অপরাহ্ন

শুধু নোটিশ দেওয়াই কি রাজউক-ফায়ার সার্ভিস-সিটি করপোরেশনের কাজ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪
  • ৭২ বার পঠিত

 

মোঃ আসাদুজ্জামান শাওন স্টাফ রিপোর্টার:  রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনের কাজ কি কেবল নোটিশ দেওয়া– এমন প্রশ্ন রেখেছেন মানবাধিবার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বেইলি রোডের ভবনটিতে বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রভাবশালী মহলের চাপ ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। যে কারণে ভবনটিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহার ও রেস্তোরাঁ পরিচালনা দুটি ভিন্ন বিষয়। যেখানে মাত্র একটি সিঁড়ি, এমন ভবনে রেস্তোরাঁ চলতে পারার কথা না। রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনের ভূমিকা কী কেবল নোটিশ দেওয়া?

রবিবার (৩ মার্চ) বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যারা প্রভাবশালী তারা কী এতোগুলো মানুষের জীবনের চেয়েও প্রভাবশালী? তারা কীভাবে দিনের পর দিন এগুলোর পুনরাবৃত্তি করছেন? এতো দুর্ঘটনার পরও কী রাষ্ট্রের টনক নড়বে না?’

মানবাধিবার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাব গাফিলতির আরেকটি উদাহরণ আবার সামনে এলো। অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা একটি আকস্মিত ও সহজাত বিষয়। এটি ঘটতেই পারে। বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরেও অগ্নিকাণ্ড হয়, কিন্তু ঢাকার সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের মতো নির্মমতা থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন– এটি অবহেলাজনিত ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড। কারণ এই ভবনগুলোর জন্য আটটি সরকারি সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন (জেলা প্রশাসন, রাজউক, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বিস্ফোরক অধিদফতর)। প্রতিটি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়িত্বের অবহেলার কারণে হত্যার অভিযোগ আনা যেতেই পারে। এ পরিস্থিতির খুব দ্রুত পরিবর্তন এবং আপাতদৃষ্টে একটি নিরাপদ নগরে পরিণত হবে ঢাকা এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।’

জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র তার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মূলত অনুমোদন দেয়, নোটিশের কিছু কাগজ তৈরি করে। কিন্তু পৃথিবীতে যেসব শহরে সুশাসন ও মানুষের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানকার সংস্থাগুলো শুধু কাগজ তৈরি করে না; নিয়মিত পরিদর্শন করে। কারও দোষ পেলে শাস্তি দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তা জোরদারে লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শর্ত মেনে বহুতল ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনের ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বিদ্যমান বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবেদন পাওয়া যায় ১ হাজার ৩৯৭টি। সংস্থাটি ছাড়পত্র দেয় ১ হাজার ৯০টি ভবনের। বাকি ৩০৭টি ভবনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করেনি। পাশাপাশি প্রস্তাবিত বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবেদন আসে ১ হাজার ১৯০টি। কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে নির্মাণের অনুমোদন দেয় ৯৫৫টি ভবনের। অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মিত হওয়া বা বিদ্যমান ভবনে ছাড়পত্র না দেওয়ার অর্থ দাঁড়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে সংস্থাটি কী কার্যক্রম নিয়েছে, তা তাদের প্রতিবেদনে নেই।’

ভবনের মিশ্র ব্যবহার সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরও ভাবা দরকার। ভবনে আলো-বাতাস প্রবাহের সুযোগ না রেখে কাঁচ দিয়ে ঘিরে পুরো ভবনকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিপদকে যেভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, সেটা পেশাজীবী, স্থপতি, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। পাশাপাশি আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক রেস্টুরেন্ট পরিচালনায় বাণিজ্যিকভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকা উচিত ছিল। তদারকিতে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এর দায় এড়াতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের দ্বিতীয় তলায় থাকা কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কোনও জানালা ছিল না। ভবনের সিঁড়িতেই গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। ফলে দুর্ঘটনায় আটকে পড়া মানুষের সিঁড়ি দিয়ে উঠা-নামাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মৃত্যুবরণকারী ৩৫ জনের মৃতদেহে কোনও পোড়া-কাটা ছিল না। তারা সবাই বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991