আজহারুল ইসলাম সাদী, স্টাফ রিপোর্টারঃ
শনিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত শহরের এলজিইডি মিলনায়তনে সাংবাদিক ঐক্যের আহবায়ক সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যথার্থভাবে শহীদ স. ম আলাউদ্দীন হত্যার বিচার করতে পারিনি?
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি নিজেও এমন একটি গুপ্ত হত্যার শিকার হতে চলেছিলাম।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন মশু বলেন, শহীদ আলাউদ্দীন মুক্তিযুদ্ধকালে অনেকের মতো আরাম আয়েশে গা ভাসিয়ে না দিয়ে কাদামাটির মধ্যে গেরিলাযুদ্ধ করে শত্রু নিধন করার সাহস দেখিয়েছেন। একজন গণপরিষদ সদস্য হিসেবে, তাকে সরিয়ে দিয়ে সাতক্ষীরার উন্নয়নকে চরম বাঁধার সম্মুখীন করা হয়েছে।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন, তিনি ছিলেন একজন ডাকসাইটের নেতা। যে কাজে তিনি হাত দিতেন তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পেছনে লেগে থাকতেন
তিনিই প্রথম এখানে কৃষিভিত্তিক সমাজ এবং শিল্পভিত্তিক বাণিজ্য গড়ে তোলার সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠে নামতাম। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন উন্নয়ন সূতিকাগারকে আমরা অকালেই হারিয়েছি। আমি ঘাতকদের বিচার দাবি করছি এবং যতদিন বিচার সম্পন্ন না হবে ততদিন আমরা সবাই মাঠে থাকবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, খুনীরা তার সাথে কৌশলে মিলেমিশে থাকতো। আর তারাই তাকে হত্যা করে সাতক্ষীরার সার্বিক উন্নয়ন ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে দিয়েছে, আমরা তার ভিতর বাইরে সবটাই দেখে বুঝতাম, তিনি মনেপ্রাণে একজন রাজনীতিক, শিল্প উদ্যোক্তা, জনদরদী জনপ্রতিনিধি ছিলেন।
তিনি জীবিত থাকলে আমরা সাতক্ষীরাকে অন্য চেহারায় দেখতে পেতাম।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, আলাউদ্দীন সাহেব আমাদের নেতা ছিলেন। তিনি আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা তার কথা যথাযথভাবে মান্য করতাম। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং সাতক্ষীরার উন্নয়নের রূপকার হিসাবে তার ভূমিকা কোনভাবেই কেউ খাটো করে দেখতে পারবে না। এই হত্যার বিচার বাস্তবায়নের জন্য যা কিছু করতে হয় আমি আপনাদের সঙ্গে থেকে তা করতে রাজী আছি। একইসাথে আমি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বিচার আদায়ে ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি।
দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম বলেন, আলাউদ্দিন সাহেবের সাথে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টার পরে পত্রদূত অফিসে আমার সাক্ষাৎ হতো। কিছুক্ষণ গল্পআড্ডা দিয়ে চা খেয়ে আমি বাড়ি চলে যেতাম। একজন শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি পাটকেলঘাটা অঞ্চলে একটি মিনি সুগার মিল তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ভোমরা স্থলবন্দরের প্রতিষ্ঠালগ্নে সেখানকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমি ও আমরা পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট করতাম।
আওয়ামী লীগ নেতা আ হ ম তারেক উদ্দিন বলেন, স. ম আলাউদ্দীন সাতক্ষীরাকে গড়তে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারলো না। ঘাতকদের বুলেট তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। আমি এই হত্যার বিচার বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন,
হত্যার রাতে আমি নিজে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ঘাতকদের পিছু ধাওয়া করেছিলাম, সেইসাথে পুলিশও। এরই মধ্যে একজন ঘাতককে সেখানে গাড়ি নিয়ে এসে বলতে শুনলাম, আলাউদ্দিন এখনও মরেনি?
তাকে হত্যা বাস্তবায়নের জন্য ১৬ জুন প্রস্তুত হয়েছিল ঘাতকরা। কিন্তু বন্দুকের গুলি বের না হওয়ায় ওইদিন তারা আলাউদ্দীন ভাইকে হত্যা করতে পারেনি।
হত্যার আগে ও পরে আমি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যেসব ঘটনা দেখেছি তা আদালতে তুলে ধরেছি। আমি এই হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করি।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন তার মধ্যে ছিল, কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, শিল্প ভিত্তিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা, কারিগরী শিক্ষা সম্প্রসারণ, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠাসহ বহু দিক। একারণে তিনি ঢাকা, কোলকাতা, দিল্লী সকল স্থানে সংশ্লিষ্টদের কাছে যথাযথ আবেদন করেছিলেন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী সুজন বলেন, আমার বাবা এএফএম এন্তাজ আলী ও আমার চাচা স. ম আলাউদ্দিন দুজনেই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তারা দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। দুর্ভাগ্য বশত: আমরা শহীদ স. ম আলাউদ্দীনকে অকালে হারিয়েছি। খুনীরা তাকে বেঁচে থাকতে দিলো না।
আরো বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা
আব্দুল ওয়াজেদ কচি, দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, এনজিও ব্যক্তিত্ব মাধব চন্দ্র দত্ত, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ বেতারের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ফারুক মাহবুবুর রহমান, মরহুম
আলাউদ্দীনের কন্যা লায়লা পারভিন সেঁজুতি, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনার রশিদ,
জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক আবুল কাশেম, জাসদ নেতা সুধাংশু শেখর সরকার, উদীচির শেখ সিদ্দিকুর রহমান, গনফোরাম নেতা আলী নূর খান বাবুল, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম চক্রবর্তী, ওয়ার্কার্স পার্টির ডা. মুনসুর রহমান প্রমুখ।
সভার সভাপতি সুভাষ চৌধুরী বলেন, তিনি ছিলেন একজন উদার মানসিকতার মানুষ সমাজের প্রতিটি মানুষের সাথে তার মধুর সম্পর্ক ছিল,
আমি এই হত্যার বিচার বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন
সাংবাদিক ঐক্য’র সদস্য সচিব শরীফুল্লাহ্ কায়সার সুমন।