তাড়াশ প্রতিনিধিঃ বাজারে দাম বেশি পেয়ে সরকারের খাদ্য গুদামে ধান চাল দিচ্ছেন না কৃষক ও মিল মালিকরা। এভাবেই শস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। গত দুই মাসে সরকারি খাদ্য গুদামে সংগ্রহের পরিমাণ শূণ্য রয়েছে। কৃষক ও মিল মালিকরা আমন ধান বিক্রি করতে চাল সরবরাহে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যলায় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলায় ৭৩২ মেট্রিক টন ধান এবং ১৩৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। আর ধান-চাল সংগ্রহের জন্য আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২৮ টাকা এবং চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪২ টাকা।
এদিকে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যলায় সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন ও আমন মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা এলাকায় প্রায় এক হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরসরিয়া, সাদা দিঘা, মাটিয়া গরল, ব্রি-৯০, কাটারীভোগ ব্রি-৪৯ ব্রি-৫১ স্থানীয় জাত আব্দুল গুটিসহ প্রায় ১২ থেকে ১৪ জাতের ধানের আবাদ করা হয়। পাশাপাশি শেষ অক্টোবরে পর্য্যায়ক্রমে ধান কাটা শুরু হয়। অবশ্য, এ বছর আমন আবাদে বাম্পার ফলন হয় এবং কৃষক ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।
বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ব্রি-৯০, প্রতিমণ ১ হাজার ৯০০ টাকা, কাটারীভোগ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৮০ টাকা, ব্রি-৪৯ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০, ব্রি-৫১ জাতের ধান এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা, স্থানীয় জাত আব্দুল গুটি বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। এ ছাড়া বোনা আমন ধান সরসরিয়া, সাদা দিঘা, মাটিয়া গরল প্রকার ভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এতে দেখা যায়, প্রতি মণ ধান সরকারি ক্রয় মূল্য ১ হাজার ১২০ টাকা হলেও হাট বাজারে কৃষকের ধানের দাম অনেক বেশি। পাড়িল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরকার জানান, ধান-চালের সরকার নির্ধারিত এই দাম বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম। ফলে তারা সরকারি ভাবে ধান-চাল বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন না। তা ছাড়া চলতি মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনে কৃষকদের উৎপাদন খরচ পূর্বের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। তাই বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করে তাঁদের বেশি লাভ হচ্ছে। এ কারণে গত দুই মাসে তাড়াশে সরকারি খাদ্য গুদামে এক ছটাক আমন ধানও সংগ্রহ হয়নি।
অপর দিকে তাড়াশ উপজেলায় ১২ জন মিলার রয়েছেন। কিন্তু চলতি আমন মৌসুমে একমাত্র রাবেয়া চাউল কল মালিক ছাড়া কোন মিলার খাদ্য গুদামে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হননি। যে কারণে গত দুই মাসে তাড়াশ উপজেলার সরকারী খাদ্য গুদামে এক ছটাক চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য, তাড়াশের একমাত্র চুক্তিবদ্ধ মিলার রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাজারের চালের যে দাম তাতে করে চুক্তি বদ্ধ হলেও চাল সহবরাহ করা এখনও সম্ভব হয়নি। ধানের দাম কমলে চুক্তি অনুযায়ী সরকারী খাদ্য গুদামে চাল সহবরাহ করবো।
এ ব্যাপারে চুক্তি না করা তাড়াশ উপজেলার চাউল কল সমিতির সভাপতি মো. বাবলু মিয়া বলেন, বর্তমানে মোটা ধানই ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারি ক্রয় মূল্য তার চেয়ে অনেক কম। আবার বর্তমানে প্রতি কেজি চাল তৈরি করতে একজন মিলার কে প্রতি কেজিতে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৪৫ টাকা। অথচ সরকারি চালের দর প্রতি কেজি ৪২ টাকা। এ কারণে শষ্য ভান্ডার খ্যাত তাড়াশে গত দুই মাসে ধান চাল সংগ্রহের পরিমাণ শূণ্য আছে। এরপরও কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের।
তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, বর্তমানে বাজারে ধান চালের দাম বেশি। তবে ধান চালের দাম যেহেতু উঠা নামা করে সেহেতু ধান চালের দাম কমলে হয়তো ধান চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।