শেখ মোঃ করিম বকসো,তাড়াশ প্রতিনিধিঃ রাজগঞ্জের তাড়াশে স্বরসতী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা বসেছে আজ। দিনব্যাপী এ মেলা চলবে। মেলাকে ঘিরে এলাকায় সাজ সাজ রব পড়েছে। মূলত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় মেলা। প্রায় ৩০০ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় নামি-দামি ঘোষরা তাদের দই নিয়ে আসেন। শুধু দইই নয়; এর পাশাপাশি, ঝুরি, মুড়কি, চিড়া, মুড়ি,বাতাসা, কদমাসহ নানা ধরনের রসনা বিলাসী খাবার বেচাকেনা হয় মেলায়।
তাড়াশের এই দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্পকথা। তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রজত ঘোষ জানান, তাড়াশের এই দই মেলা প্রায় ৩০০ বছরের পুরাতন এবং এই মেলার প্রথম প্রচলন করেছিলেন, তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর।
স্থানীয় জনশ্রুতি আছে , জমিদার নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নও করা হতো এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই মিষ্টি দিয়ে। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রসিক রায় মন্দিরের পাশে (বর্তমান তাড়াশ হেলিপ্যাড মাঠ) সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দই মেলা বসতে শুরু করে। সে সময় মেলা চলতো তিন দিন ধরে। তখন থেকেই প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে স্বরসতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলা শুরু হয়।
মেলায় আগত সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই প্রস্তুতকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকনও দেওয়া হতো। এখনও মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতেই উৎসব-আমেজে দই মেলা বসার বাৎসরিক রেওয়াজ থাকলেও উপঢৌকনের রেওয়াজ নেই।
মেলায় আসা নানা অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, ক্ষীরসা দই, শাহী দই, চান্দাইকোনার, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামের দই। উজ্জল, উত্তম, সাইদসহ একাধিক দই প্রস্ততকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের দাম; সবই বেড়েছে তাই দইয়ের দামও বেড়েছে। মেলা একদিনের হলেও চাহিদা থাকার কারণে মেলায় আসা দই অবিক্রিত থাকে না।
অপরদিকে মেলায় দই কিনতে আসা শফিকুল, আক্কাস, শাহারিয়ারসহ একাধিক ক্রেতা জানান, এই মেলা থেকে আমরা প্রতিবছরই দই কিনি। বর্তমানে সড়া বা খুঁটির যে দই কেনা হয় সেখানে অর্ধেক পরিমাণ দই, বাকি অর্ধেক দইয়ের পাত্রের ওজন। এতে করে ভোক্তা হিসেবে আমাদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। তবে এই মেলায় আগত দই স্বাদে ও গুনে অতুলনীয়।