কে এম নাছির উদ্দিন সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার:
সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের চাঞ্চল্যকর সাফল্য: চৌহালীর চরে খামারিকে খুন করে গরু ডাকাতির রহস্য উদ্ঘাটন, ৭ আন্তঃজেলা ডাকাত গ্রেফতার, উদ্ধার ১টি ষাঁড় গরু
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম কাউলিয়ার চরে খামারিকে খুন করে গরু ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অদ্য ২১জুন ২০২৫ তারিখে। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে এবং একটি ষাঁড় গরু উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনা সংক্ষেপ:
গত ২০ মে ২০২৫ খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যায় চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায় যমুনা নদীর চরে খামারি তারা মিয়া (৬৫) এবং তার নাতি ইব্রাহিম খলিল (১৮) গরু পাহারার জন্য রাতে অস্থায়ী ছাপড়া ঘরে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ১০-১২ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল ঘরে ঢুকে তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং তিনটি গরু লুট করে। ডাকাতদের নির্মম নির্যাতনে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় তারা মিয়ার।
পরদিন সকালে নাতি ইব্রাহিম খলিল হাতের বাঁধন খুলে স্থানীয়দের জানান। তারা এসে দেখতে পান তার মিয়া মারা গেছেন। ঘটনায় চৌহালী থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা ও ডাকাতির মামলা দায়ের হয়।
ডিবি পুলিশের অভিযান:
সিরাজগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফারুক হোসেন-এর নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) জনাব মোঃ কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা এবং ডিবি অফিসার ইনচার্জ মোঃ একরামুল হোসাইন, পিপিএম-এর নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ টিম তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের পরিচয়:
১. মোঃ ইউসুফ আলী (২৮)
পিতা: মৃত ওসমান দেওয়ান
সাং: মুলকান্দিচর, থানা: বেলকুচি, জেলা: সিরাজগঞ্জ
২. মোঃ শাহ আলম (৪০)
পিতা: মোঃ শামসুল হক প্রাং
সাং: শামশৈল, থানা: কালিহাতী, জেলা: টাঙ্গাইল
৩. মোঃ হাসান মন্ডল (২৫)
পিতা: মৃত মকতেল মন্ডল
সাং: চর কুমলি, থানা ও জেলা: টাঙ্গাইল
৪. মোঃ আমির হোসেন (৪৫)
পিতা: মৃত আঃ রহিম
সাং: চর কুমলি, থানা ও জেলা: টাঙ্গাইল
৫. মোঃ শাহিদ @ সাঈদ (৪১)
পিতা: মৃত রজব আলী
সাং: ছোট নলছিয়াপাড়া (চরচন্দনী), থানা: ভূঞাপুর, জেলা: টাঙ্গাইল
৬. মোঃ আঃ মালেক (২৮)
পিতা: মৃত হবিবর রহমান
সাং: খয়াপাড়া, থানা ও জেলা: সিরাজগঞ্জ
৭. মোঃ ইসমাইল ব্যাপারী (৫৩)
পিতা: মৃত আছের উদ্দিন
সাং: ধুলবাড়ী, থানা ও জেলা: টাঙ্গাইল
তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ পরিকল্পনার চিত্র:
ডাকাতরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, ঘটনার রাতে তারা দুইটি নৌকায় করে মোট ১৭-১৮ জন একটি সংঘবদ্ধ দল হিসেবে চরে আসে। তারা মিয়া ও ইব্রাহিম ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালে ছাপড়ায় ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হামলা চালায়। তিনটি গরু নৌকায় তুলে নিয়ে যায় এবং পরে পুংলী ঘাটে গিয়ে বিক্রি করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। পরবর্তীতে প্রত্যেকে ৫ হাজার টাকা করে ভাগ করে নেয়।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য:
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন,
“এটি ছিল একটি পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ ডাকাতি এবং হত্যা। ডিবি পুলিশের গোয়েন্দা দক্ষতায় দ্রুত সময়েই মামলার রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে। পলাতক অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া:
এই সফল অভিযানে এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।