শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

সিলেটে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৫ বার পঠিত

 

এ আর ছায়েম সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:  সিলেটের মীরেরগাঁওয়ের বাসিন্দা সুলতানা খাতুন (২৪) যৌতুকের দাবিতে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা হয়েছে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মোঃ বদরুজ্জামান (২৮)-এর সঙ্গে সুলতানার বিয়ে হয়। ২ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে হলেও বিয়ের পরপরই যৌতুকের জন্য সুলতানার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিয়ের কিছুদিন পর ১ নম্বর আসামি বদরুজ্জামান বিদেশে যাওয়ার জন্য সুলতানার পিতার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে সুলতানা তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এ ছাড়া, ২ থেকে ৭ নম্বর আসামিরা মিলে সুলতানার উপর আরও বেশি করে নির্যাতন চালায় এবং বিভিন্নভাবে তাকে হেনস্তা করে।

মামলার আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হলো, সুলতানার স্বামী মোঃ বদরুজ্জামানের সঙ্গে ৩ নম্বর আসামি সাজেদা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাতে সুলতানা তার স্বামীকে ৩ নম্বর আসামির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান এবং বাধা দিলে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়। এরপর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিষয়টি উপেক্ষা করে এবং সুলতানাকে আরও নির্যাতন করে।

২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সুলতানার ওপর আবারও মারাত্মক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এতে সুলতানার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে, পুলিশ কেস হওয়ার আশঙ্কায় স্বামী বদরুজ্জামান তাকে তাড়াহুড়ো করে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

মামলার আরও তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জুলাই সুলতানা কুমারপাড়ার সিলমাউন্ট জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সন্তানের জন্মের খবর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানানো হলেও তারা নবজাতককে দেখতে আসেনি এবং সুলতানার কোনো খোঁজও নেয়নি।

যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন এবং সন্তান জন্মের পরও শ্বশুরবাড়ির অবহেলার কারণে সুলতানা তার পিতা ও ভাইয়ের মাধ্যমে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। ইউপি সদস্য নেছার আহমদের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক হলেও আসামিপক্ষ কোনো সমাধান দিতে রাজি হয়নি। এরপর সুলতানা থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তাকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়।

সুলতানা খাতুনের অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ সালের ১১(গ)/৩০ ধারায় ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং সন্তান ও মায়ের প্রতি অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাদীনির পক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির দাবি করা হয়েছে।

মামলাটি বর্তমানে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার শুনানি শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাদীনি সুলতানা খাতুন।

এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর মামলা, যেখানে গৃহবধূ সুলতানা খাতুনের ওপর যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মামলার শুনানির পরই জানা যাবে, আইন তার পক্ষে সুবিচার নিশ্চিত করতে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991