বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

সুদের টাকায় বেপরোয়া আওয়ামী লীগ নেতার আলিশান বাড়ি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২
  • ২৬২ বার পঠিত

গাইবান্ধার জেলা ব্যুরো প্রধানঃরানা ইস্কান্দার রহমান

গাইবান্ধায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুদখোররা। বিনা লোকসানে এই ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু প্রকৃতির মানুষ। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের খেয়াল খুশি মতো উচ্চ মাত্রার লাভে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু তাই নয় সুদ গ্রহিতার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও ফাঁকা চেক নিয়ে জিম্মি করছে তাদের। অনেক ক্ষেত্রে আসল ও কিছু সুদের টাকা পরিশোধ করলেও সুদের সুদ দিতে না পারলে ঐ দুই কাগজের বলে আইনের মারপ্যাচে জেলে যেতে হচ্ছে অসহায় সুদ গ্রহিতাকে। আবার হয়েছেন অনেকেই সর্বস্বান্ত।

জেলার সর্বোচ্চ এমন অবস্থা চললেও কিছু কিছু সুদখোররা টার্গেট করে নিয়েছে রেস্ট্রি অফিসকে।
এই অফিসে দিন দিন সুদের ব্যবসা বেড়েই চলেছে। দৈনিক, সপ্তাহিক ও মাসিক হারে চলছে জমজমাট এ ব্যবসা। আর এই ব্যবসার অন্তরালে একজন আওয়ামী লীগ নেতার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

বছর কয়েক আগেও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক সম্পাদক মোজাম্মেল হক ঝিলেন ছিলেন কাকড়ার ব্যবসায়ী। বাড়ি জেলা শহরের সরকার পাড়ায়। সুদের কারবার করে সেই ঝিলেম শূন্য থেকে এখন কোটিপতি। সুদের জাঁতাকলে ফেলে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে, পথে বসিয়ে ঝিলেম বিপুল সম্পদ ও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। করেছেন শহরের বুকে দুটি বিলাসবহুল বাড়ি যার একটি নির্মাণাধীন।

ইতোপূর্বে জেলার অনেকেই সুদ মেটাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। সুদের টাকাকে কেন্দ্র করে খুন, অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে একাধিক। সুদখোরের লাথিতে অন্ত:সত্বা মায়ের গর্ভপাতের ঘটনা ও সুদ গ্রহিতা ব্যক্তির জানাযা নামাজ আটকিয়ে সুদের দেন দরবার করার মতো অমানবিক কাজও ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত বৈধ কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই ঝিলেমের। নেই নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসাও। শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে সুদের কারবার করে হঠাৎ করেই তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন। তিনি জেলার সরকার পাড়ায় ২ দুটি বাড়ি, গাড়িসহ অসংখ্য জমিজমাও ক্রয় করেছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাড়ী করার উপযোগী জমির বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়া ঝিলেমের নিজের বসবাসের জন্য রয়েছে পাঁচ তলা আলিশান বাড়ি। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ওই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি আরেকটি বাড়ি নির্মাণ করছেন সেটি ও ব্যয়বহুল।

স্থানীয়রা জানান, অত্যন্ত ধুরন্ধর এই ঝিলেম। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নামমাত্র টাকা রাখলেও সুদের কারবার করে অর্জিত বিপুল অঙ্কের অবৈধ টাকা নিজের কব্জাতেই রাখেন। ঝিলেমের বেশভুষা ও চালচলন দেখে কারোর ধারণাতেই আসবে না, এত অর্থ সম্পদ রয়েছে তার। কোটিপতি হলেও ঝিলেমকে দেখলে এখনো সেই কাকরা গাড়ির অতি সাধারণ ব্যবসায়ীর মতোই মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই উল্টো।

ঝিলেম বিপদগ্রস্ত মানুষজনকে ঠকিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন বিপুল অর্থ সম্পদের পাহাড়। শুধু ঝিলেম নামে অনেকে তাকে না চিনলেও সুদখোর ঝিলেম হিসাবে এক নামেই চেনেন সবাই। বর্তমানে এ জেলায় যেসব সুদের কারকারি আছেন তাদের মধ্যে ঝিলেমের অবস্থান সবার শীর্ষে। অন্যদের ছাপিয়ে রমরমাভাবে চলছে তার এই অনৈতিক কারবার। অবৈধ টাকার জোরে তিনি অর্জন করে নিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদটি ও। এ কারণে ঝিলামের এখন পোয়াবারো অবস্থা।

একাধিক সূত্র জানায়, হঠাৎ জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে যারা টাকার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েন তাদেরকেই মূলত টার্গেট করেন ধুরন্ধর ঝিলেম। অর্থ সংকটে পড়া বিপদগ্রস্ত এসব মানুষজন তাৎক্ষণিক ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর কিংবা টিপ সই দিয়ে চড়া সুদে ঝিলেমের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করেন। টাকায় পোষা নিজের অনুগত ব্যক্তিদের সাক্ষী করে নিজ ইচ্ছামতো এসব স্ট্যাম্প করে নেন তিনি।

এ ছাড়া অনেকের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, জমির দলিলপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক নিয়েও টাকা দিয়ে থাকেন ঝিলেম। বিনিময়ে নিয়ে থাকেন মোটা অঙ্কের সুদ। অনেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়েও তার বেহিসাবী সুদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেন না। আসল টাকা পরিশোধ হওয়া তো দূরের কথা, আটকে থাকেন তার পেতে রাখা সুদের জালের ফাঁদে। সুদই যেন উসুল হয় না তার।

বড় মাপের সুদ কারবারি ঝিলেমের সুদের জাঁতাকলে পৃষ্ট হয়ে বহু মানুষ সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। দিন দিন ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছেন। পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পথে বসছেন। কিন্তু ভয়ভীতি দেখানোয় ভুক্তভোগীদের কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে তার এই রক্তচোষা ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে দলের দায়িত্বশীল কারোরই নজর নেই।

বিপদে পড়া অসহায় মানুষজনের মাঝে নিজস্ব শর্ত সাপেক্ষে টাকা বিলিয়ে বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন চড়া সুদ। এভাবেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে সুদের কারবার করে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হন ঝিলেম। বেপরোয়া ঝিলেমের লাগামহীন সুদের কারবার বন্ধে ও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এখনই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য ঝিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাকে পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
Developed By Bangla Webs
banglawebs999991