মিনহাজুল হক বাপ্পী,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
ওই কিশোরের নাম সোহাগ ইসলাম। বয়স আনুমানিক ১২ বছর হবে। তার বাবা নুরুজ্জামান আহমেদ একজন ভ্যান চালক। মা ছামছুর নাহার গৃহিণী। যে বয়সে তার হাতে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা , সেই বয়সে একটি দরিদ্র পরিবারে তার বাবা-মাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য আইসক্রিম বিক্রি করছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নের কেকতীবাড়ি এলাকার কিশোর সোহাগ ইসলাম। সোহাগ স্থানীয় কেকতীবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তবে এলাকার আর দশজন কিশোরের মতো সে বাস করে না।
অর্থের অভাবে সংসার সামলানোর জন্য সাইকেলের পেছনে আইসক্রিম বক্স নিয়ে প্রতিদিন বের হয় সোহাগ। রোজগারের তাগিদে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইসক্রিম বিক্রি করেন।
কিশোর সোহাগ বলেন, প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকায় আইসক্রিম বিক্রি করি। আইসক্রিম কেনার জন্য মালিককে দিতে হয় ২৫০ টাকা। আর বাকি টাকা বাবাকে দিয়ে দেই।
সোহাগ আরও জানান, এর আগে তিনি কখনো আইসক্রিম বিক্রি করেননি। করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি আইসক্রিম বিক্রি শুরু করি। আমি তখন থেকে আইসক্রিম বিক্রি করছি। এছাড়া বাবা অসুস্থ থাকায় আগের মতো ভ্যান চালাতে পারেনা। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি আইসক্রিম বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা সংসারের কাজে দেই।
সোহাগের মা ছামছুর নাহার জানান, সোহাগের বাবা যক্ষ্মা রোগী। তাই আগের মত পরিশ্রম করতে পারে না। একা বাড়িতে চারজনের সব খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি আইসক্রিম বিক্রি করে পরিবারকে যে টাকা দেন তাতে বাবার কষ্ট কমে যায়।
কেকতীবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী এ কাজে যুক্ত হয়েছে। সোহাগের কথা জানি না। তবে অনুসন্ধানে তাকে স্কুল থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে। সোহাগকে সাহায্য করতে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।