নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন মাইলফলক স্থাপন করল কোলকাতার ডিসান হাসপাতাল। ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে ছাদে হেলিপ্যাড নির্মাণ করেছে এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক অবতরণের মাধ্যমে এই পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে উড়ান শুরু করে অগাস্টা ১০৯ এসপি হেলিকপ্টারটি নিরাপদে সফলভাবে ডিসান হাসপাতালের ছাদে অবতরণ করে। দক্ষ পাইলট ক্যাপ্টেন ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের নিয়ন্ত্রণে এবং কো-পাইলট ক্যাপ্টেন সঞ্জীব শর্মার সহায়তায় এটি হাসপাতালের ছাদে অবতরণ করে। এসময় সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় গিয়ার দিয়ে এটি প্রস্তুত ছিল যাতে অবতরণ নির্বিঘ্ন হয়। পরীক্ষাটি পরিচালিত হয় ডিজিসিএ অনুমোদিত সংস্থা ওএসএস এয়ার ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সহযোগিতায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিজিসিএ-এর একজন পর্যবেক্ষক ছাড়াও হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালের ইন্টারন্যাশনাল ডেক্স এর ইনচার্জ মি, অঙ্কন চক্রবর্তী জানান, প্রকৌশলী শ্রী, সজল দত্ত দ্বারা ২০০৮ সালে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিসান হস্পিটাল ও হার্ট ইনস্টিটিউট হলো ভারতের একটি নামী এনএবিএইচ স্বীকৃত হাসপাতাল এবং হার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মধ্যে, ডিসান হাসপাতাল ভারত সরকারের কাছ থেকে এনএবিএইচ স্বীকৃতি লাভ করে। সমগ্র ভারতে এতো কম সময়ের মধ্যে, এনএবিএইচ স্বীকৃতি, ডিসানের আগে কোনো হাসপাতাল পায়নি।
তিনি আরও জানান, ডিসান হাসপাতাল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত এই অঞ্চলের প্রথম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, যা এনএবিএইচ স্বীকৃত। ৭৫০ বেডের এই মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে রোগীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এছাড়াও ডিসান উত্তরবঙ্গে ৩০০ বেডের একটি মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল পরিচালনা করে। যা ওই অঞ্চলটির সর্বকনিষ্ঠ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনএবিএইচ স্বীকৃতি পেয়েছে। ডিসান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও মানবিক স্পর্শের সমন্বয়ে সবার কাছে সুলভ ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ডিসান হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, শ্রী সজল দত্ত বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন মাইলফলক স্থাপন করল ডিসান হস্পিটাল ও হার্ট ইনস্টিটিউট। এই হাসপাতাল এনএবিএইচ স্বীকৃত হাসপাতাল এবং হার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটই শুধু নয় এটা স্বল্প খরচে সব ধরণের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এই হাসপাতাল অন্যসব চিকিৎসার পাশাপাশি ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। এই হাসপাতাল শুধু ভারতবর্ষেই নয়, বাংলাদেশ নেপাল ভুটান, শ্রীলঙ্কা তথা দক্ষিণ এশিয়ার রোগীদের চিকিৎসার জন্য রোগীদের নির্ভরযোগ্য হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে ছাদে হেলিপ্যাড নির্মাণ করেছে এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক অবতরণের মাধ্যমে এই পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। ছাদের ওপর হেলিপ্যাড থাকায়, আমরা জরুরি পরিস্থিতিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের আরও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারব। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট প্রয়োজন এমন রোগীদের জন্য এটি জীবনদায়ী প্রমাণিত হবে। পরীক্ষাটি সফল হওয়ায় আমরা এখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা প্রদান করতে প্রস্তুত।
মি, সজল দত্ত আরও জানান, ডিজিসিএ-এর সঙ্গে পরামর্শ করেই কলকাতা হাসপাতালের নতুন ভবনের নকশা ও পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার উপরে এই হেলিপ্যাড নির্মিত। এই হেলিপ্যাড নির্মাণ ছিল যথাযথ প্রকৌশল ও শক্তিশালী নির্মাণশৈলীর একটি নিদর্শন। আমরা শুধু বলতে চাই, জীবন-মৃত্যুর জরুরি মুহূর্তে প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। ডিসান এখানে সেরা স্বাস্থ্যসেবার দ্রুত ও সহজলভ্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।
ডিসানের ছাদে হেলিপ্যাড স্থাপনের উদ্যোগ শুধু ভারতের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নয়, বরং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক। এটি ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য হাসপাতালের জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে।