মোঃ ফরিদুল ইসলাম রায়গঞ্জ প্রতিনিধিঃ হারিয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের শীতলপাটি।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রাম আটঘরিয়া। রায়গঞ্জ উপজেলা সদর হতে চার কিলোমিটার দুরে ধানগড়া ইউনিয়ন পরিষদ। ধানগড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঠিক দুই কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে ফুল জোড় নদীর পূর্ব পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে আটঘরিয়া গ্রাম। জমিদার পরিবারের বসবাসের কারণে গ্রামটি ব্রিটিশ আমল থেকেই সবার কাছে পরিচিত। পাশাপাশি শীতলপাটি এনে দিয়েছে এ গ্রামের আলাদা পরিচিতি।
ছায়া সুনিবিড় গ্রামটিতে অনেক আগে থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বসবাস করছে হিন্দু মুসলমান। গ্রামটিতে রয়েছে শতাধিক হিন্দু পরিবারের বাস। এ গ্রামের মুসলমান সবাই কৃষি কাজে জড়িত থাকলে ও হিন্দুরা শতভাগ শীতল পাটির কারিগর। ঠিক কতদিন ধরে তারা এ কাজ করে আসছে তা কেউ সঠিক ভাবে বলতে না পারলেও বংশ পরম্পরায় তারা এ কাজে জড়িত তা বোঝা যায়।
শীতল পাটির মূল উপকরণ হচ্ছে রাতা বা মূর্তা গাছ। যা স্থানীয় ভাবে ব্যাত বা পাত্তিয়া নামে পরিচিত। এই পাত্তিয়া গাছ চেরাই করে পাটি বুননের মূল উপকরণ নেইল তোলার কাজটি করে থাকে হিন্দু পুরুষেরা। আর পাটি বুননের মূল কারিগর হলো হিন্দু মহিলারা। যদিও বর্তমানে বেশ কিছু মুসলমান মেয়েরাও তাদের সাথে পাটি বোনার কাজ করে থাকে তবু ভাল মানের পাটি শুধু হিন্দু মেয়েরাই বুনতে পারে। পুরুষদের তোলানো নেইল সিদ্ধ করে তাতে বিভিন্ন রকমের রং লাগিয়ে নানা ডিজাইনের পাটি বুনে থাকে তারা। মান ভেদে হাজার টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে এক একটা পাটি। অর্ডার করে বানিয়ে নিলে আরো বেশি দামী পাটি বানিয়ে দেয়া হয়। স্হানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ আশেপাশের প্রায় সকল জেলাতেই বিক্রি হয়ে থাকে আটঘরিয়ার শীতলপাটি।
এক সময়ের খ্যাঁতি জড়ানো আটঘরিয়ার শীতলপাটি ক্রমেই তার জৌলুশ আর খ্যাঁতি হারাতে বসেছে। কারিগরিরা অনেকেই বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। শীতল পাটির কারিগর রবি চন্দ্র দে বলেন পাটি গাছের দাম বেড়ে যাওয়া ও কম দামে সিনথেটিক পাটি বিক্রি হওয়াতে ব্যবসা টিকে রাখা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারিগরিদের প্রশিক্ষন ও সরকার বা বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ঋনের ব্যবস্থা করতে না পারলে এক সময় শীতল পাটির ব্যবসা হারিয়ে যাবে। খাদ্য শষ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক শীতলপাটির ক্ষেত ভেঙ্গে ধান চাষ করছেন। ধানগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ উদ্দিন খানের সময় এল জি এস পির একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে শীতল পাটির কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন উপকরণাদি কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, পাশাপাশি শীতলপাটি থেকে বিভিন্ন প্রকার শৌখিন ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। বর্তমানে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বিভাগ কর্তৃক কয়েকজন কে ঋণ দেয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বল্প সূদে কিছু ঋণ দিয়েছি, ভালো ফলাফল পেলে ভবিষ্যতে ঋণের পরিমান বাড়ানো হবে। তাই আসুন সবাই মিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে শীতল পাটির ঐতিহ্য রক্ষা করি, শীতলপাটিকে বাঁচিয়ে রাখি।