নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
৩০ বছরে পা রাখল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। ১৯৯২ সালের ১লা জুলাই চারটি থানা ও ১০টি ফাঁড়ি নিয়ে গঠিত হয় ৭৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।
পর্যায়ক্রমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জনবল ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ২০১৮ সালে চারটি থানার স্থলে ১২টি থানায় রুপান্তর করা হয়। ১২টি থানা এলাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ বর্গ কিলোমিটার থেকে ৪৭২ বর্গ কিলোমিটারে।
৩০ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক সদস্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে হতাহত হয়েছেন। আর অনেকে পেয়েছেন পদক ও পদোন্নতি।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর তৎপরতার কারণে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আসলেও জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে বিপক্ষে শক্তিগুলোর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ভয়াবহ সন্ত্রাসী কার্মকান্ড হিসেবে বিস্তৃতি লাভ করে। যা কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
আরএমপির প্রতিষ্ঠার পর চুরি, ছিনতাই, মাদক বেচাকেনাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিন্মমুখি হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় সংঘর্ষ, কিশোর অপরাধ এবং ইভটিজিং প্রায় নাই বললেই চলে।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ভয়াল মহামারী কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাস মহামারী রুপ নিলে রাজশাহী শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়। তখন সরকারী বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বেশ কিছু জন সেবা মূলক পদক্ষেপ নিয়ে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়ায়। যা রাজশাহীবাসীকে উদ্বেলিত করেছে। উজ্জ্বল করেছে পুলিশের ভাবমূর্তি।
করোনাকালে আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সময়োপযোগী মানবিক পদক্ষেপ বিশেষত আরএমপির পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক তৈরি করে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেয়া হয়।
করোনাকালিন সময়ে যেন নায্য মূল্যে অক্সিজেন ক্রয় করতে পারে সে জন্য নায্য মূল্যে অক্সিজেন বিক্রয়ের চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মহানগরবাসীর মাঝে প্রায় দেড় লাখ মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন।
লকডাউন পরিস্থিতিতে মানবিক সংকটে পড়া অসহায়, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের পেশাজীবী প্রায় ১১ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন। শুধু শহরেই নয় প্রত্যন্ত চরাঞ্চল চরমাজারদিয়াড়েও নিজে উপস্থিত থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি চরবাসীর যোগাযোগের জন্য রাস্তা তৈরি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
রাজশাহী নগরীতে অপরাধ প্রবণতা কমাতে নগরজুড়ে ৫০০ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপণ করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন মহানগরবাসী।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, অপরাধপ্রবণতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী নগরবাসী এর সুফল ভোগ করছে। নগরজুড়ে ৫০০ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপণ এর সুবাদে মহানগরীর বিভিন্ন ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামি ও চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের শনাক্তও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের দিক নির্দেশনায় ২০২০ সালে ২৭ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
রাজশাহী মহানগরে যাতে কোনো ধরনের সাইবার ক্রাইম সংঘটিত না হয় এবং কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে পুলিশের স্বতন্ত্র এই ইউনিট কাজ শুরু করে। সাইবার ইউনিটের সাহায্যে গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রমাণহীন তিন শতাধিক অপরাধের রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ক্রুলেস হত্যাকান্ড রয়েছে।
আরএমপির সাইবার ইউটিনের ইনচার্জ সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী জানান, আরএমপির সাইবার ইউনিটের সাহায্যে এ পর্যন্ত মহানগরীর বাসাবাড়ি ও সড়কে মোটরসাইকেল চুরির শতাধিক ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৩০টির বেশি ছিনতাই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে মহানগরীতে অপরাধীদের দৌরাত্ম কমেছে।
কিশোর অপরাধীদের ডাটাবেজ তৈরির কারণে অপরাধীদের কর্মকান্ড প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) এলাকায় কিশোর অপরাধ দমনে তৈরি করা হয় কিশোর গ্যাং ডিজিটাল ডাটাবেজ। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ কিশোরের বিস্তারিত তথ্য ডিজিটাল ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত কিশোরদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, অভিভাবকের নাম, প্রাতিষ্ঠানিক ঠিকানা, সম্ভাব্য চলাচলের এলাকা, মোবাইল নম্বর, ছবিসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে সংগ্রহ করে এই ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে।
এসময় আরএমপির পুলিশ কমিশনার আরও জানান, বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে আরএমপির ১২টি থানার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আরএমপির ১২টি থানার মধ্যে তিনটি থানা সরকারী জায়গা বরাদ্দ পেলে সেই জমিতে থানার নিজস্ব ভবনের তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। বাকি থানা গুলেও যেন নিজস্ব ভবনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সে চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজার বাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্যরাই সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেই সময়ের শহীদ হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের স্মরণে রাজশাহী পুলিশ লাইস্ এ পুলিশ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক এর উদ্যোগে এই যাদুঘরটি নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের দিক নির্দেশনায় পুলিশের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য এই যাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এই যাদুঘরের মাধ্যমে ভবিষৎ প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের অবদান জানতে পারবে। শহীদ পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের স্মৃতি সংগ্রহ করছি।
সব মিলিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ত্রিশ বছরে কাঙ্খিত সুফল দিতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এই পুলিশী সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটি।