জাহাঙ্গীর আলম
ক্রাইম রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ব্যস্ততম আউলিয়া বাজারে ১৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ঘটে গেলো এক হৃদয়বিদারক, বেদনাদায়ক ও বিভৎস ঘটনা। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার সামান্য সংঘর্ষ—যা সাধারণ পরিস্থিতিতে তর্কাতর্কিতে সীমাবদ্ধ থাকার কথা—সেটিই মুহূর্তের উত্তেজনায় পরিণত হলো প্রাণঘাতী সহিংসতায়। একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, এক পরিশ্রমী মানুষের জীবন থেমে গেল সড়কের ধুলোয়।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, দুপুরের সময় আউলিয়া বাজারের সামনে একটি অটোরিকশা ধীরে চলছিল। ঠিক সেই সময় পিছন দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলটির সঙ্গে অটোটি সামান্য ধাক্কা লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সংঘর্ষটি খুবই সামান্য ছিল, যা কয়েকটি কথা বলেই সমাধান করা যেত।
ধাক্কার পর মোটরসাইকেলচালক উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তর্কের একপর্যায়ে মোটরসাইকেলচালক তার হাতে থাকা ছোট কাটের লাঠি উঠিয়ে অটোরিকশাচালকের মাথা ও বুকে আঘাত করেন। আঘাত এতটাই শক্ত ছিল যে অটোরিকশাচালক সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। কয়েক সেকেন্ড পরই তিনি পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু চিকিৎসকরা জানান—
“হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।”
নিহত অটোরিকশাচালকের বাড়ি চাঁনপুরে। পরিচয়ে তিনি তোতা চৌকিদারের ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর সংবাদে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে কেঁপে উঠেছে পুরো বাড়ি। পরিবারের সদস্যরা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
“এ মানুষটা শান্ত স্বভাবের ছিল। পরিশ্রম করে পরিবার চালাতো। তার মৃত্যুর পর পরিবার এখন পুরোপুরি অসহায় হয়ে গেল।”
আউলিয়া বাজার, চাঁনপুর এবং আশপাশের এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক ও ক্ষোভের ছায়া। স্থানীয়রা বলছেন—
“একটু ধৈর্য রাখলে, একটু সহনশীলতা দেখালে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রাণ নেওয়ার মতো বর্বরতা সমাজে কীভাবে বাড়ছে?”
ব্যবসায়ীরা জানান, ঘটনাটি ঘটার পর বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই নিজ চোখে দেখেছেন একজন মানুষের শেষ নিস্তব্ধতা।
ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। মোটরসাইকেলচালকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিজয়নগর থানা।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটকের জন্য রাত থেকেই বিশেষ অভিযান চলছে।
“এটি একটি দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত হত্যাকাণ্ড। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”
ঘটনাটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং সমাজে ক্রমবর্ধমান রাগ, উত্তেজনা ও সহনশীলতার অভাবের এক স্পষ্ট উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
“ধৈর্যের অভাব, মানসিক চাপ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষ খুব দ্রুত উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। ছোট ঘটনায় বড় বিপদ ডেকে আনছে।”
আজকের এই নির্মম ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়—
এক মুহূর্তের রাগ, আবেগ ও উত্তেজনা একটি পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিতে পারে।
সামান্য তর্ক, ধাক্কা বা ভুল বোঝাবুঝি কাউকে প্রাণ হারানোর কারণ হতে পারে—এটি সমাজের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা।
মানবিকতা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও শান্তির চর্চা বাড়াতে না পারলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে—আর আমরা হারাবো আরও অনেক স্বজন, অনেক অসহায় মানুষ।