জাহাঙ্গীর আলম ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযান “অপারেশন ডেভিল হান্ট”-এ আওয়ামী যুবলীগের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। “কোয়ালিটি অ্যারেস্ট” কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এই অভিযানটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সংঘবদ্ধ অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগে থানার পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে দশটা থেকে ভোর পর্যন্ত পুলিশ একাধিক স্থানে অভিযান চালায়।
অভিযানে গ্রেফতার হন মোগড়া বাজার এলাকার মৃত নোয়াজ আহাম্মেদ মুন্সীর পুত্র শেখ সাদী (৫২) এবং বাবুল প্রফেসরের বাড়ির পাশের মৃত আলী আহাম্মদ মিয়ার পুত্র আদেল মাহমুদ রাজু (৪৩)। দুজনই স্থানীয় মোগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে কিছু নথি ও ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। তবে সেগুলোর বিস্তারিত তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন বলেন, “মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশ এখন আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমাদের ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ মূলত এলাকায় অপরাধী চক্র চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে অংশ নিয়ে আমরা দুইজনকে আটক করেছি। তদন্ত চলছে, প্রমাণ মিললে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“আখাউড়াকে মাদক ও অপরাধমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের সহযোগিতা পেলেই এ অভিযান আরও জোরদার করা হবে।” এদিকে গ্রেফতারের ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ একে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সফল অভিযান হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি দলীয় শৃঙ্খলার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ন্যায্য পদক্ষেপ।
স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যুবলীগ সবসময় আইন মেনে চলার পক্ষপাতী। কেউ যদি দলের নাম ব্যবহার করে অপরাধে জড়ায়, তার দায় সংগঠন নেবে না। অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।”
অভিযান চলাকালে এলাকার সাধারণ মানুষ পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মোগড়া বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, “কিছুদিন ধরে এলাকায় অপরিচিত কিছু লোকজনের আনাগোনা বাড়ছিল। পুলিশের এই অভিযান আমাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। আমরা চাই এভাবে নিয়মিত অভিযান হোক।”
“অপারেশন ডেভিল হান্ট” আখাউড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে চলবে। এরই মধ্যে আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোয়ালিটি অ্যারেস্ট কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো— শুধুমাত্র অভিযোগ নয়, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা।
এর ফলে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়ে বরং নিরাপত্তা পাবে।
এ ঘটনায় আখাউড়ার রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের অভিযান রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ভেতরের অনৈতিক কার্যক্রম রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।