এস এম জসিম বিশেষ প্রতিনিধি
জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্ঘাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ সকাল ৯:৩০ টায় সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য র্যালি ও র্যালি শেষে সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয়: "নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি"। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলাপ্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), চট্টগ্রাম জনাব মোঃ শরীফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব আতিয়া চৌধুরী, উপপরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জনাব মো. ফরিদুল আলম, উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এবং জনাব মোঃ মোছলেহ উদ্দিন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম। উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সরকারি কর্মকর্তাগণ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তাগণ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত সেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণার্থীগণ।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশীর প্রধান নির্বাহী জনাব মনোয়ারা বেগম, মানবাধিকার কর্মী ও ইলমার প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু ও স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশন এর মোহাম্মদ আলী সিকদারসহ ব্রাক, ইপসা, যুগান্তর, ঘাসফুল, বিটা, সিডিসি, উষা নারী উন্নয়ন সংস্থা, ওয়াই এ এস ডি, কারিতাসের কর্মকর্তাগণ এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা অনলাইনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান । এজন্য তারা এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। প্রতিবন্ধী নারী এবং প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ; গণপরিবহন, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি যৌন হয়রানী প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও কার্যকর করা; পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিজ পরিবারে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে মতামত প্রদান করেন। এসময় অংশগ্রহণকারীগণ গত দশমাসে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার তথ্য উপস্থাপন করে সহিংসতা প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার মতামত প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের সব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুর পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করার মতামত দেন। উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় তাঁর বক্তব্যে নারীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার গুরুত্ব উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথি জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলাপ্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম তাঁর বক্তব্যে সবাইকে আত্মসচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আগামী প্রজন্মকে সঠিক নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার জন্য পূর্বসূরিদের সঠিক ব্যাক্তিত্ব ও নৈতিকতা প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন নারী ও কন্যাশিশুসহ যারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, তাদের প্রতি সহিংসতা যারা ঘটাচ্ছেন তারা আমাদেরই কোনো না কোনো পরিবারে বসবাস করেন। বিভিন্ন সভায় মুখে ভালো ভালো কথা বলে এসব সহিংসতা প্রতিরোধ করা যাবে না। আবার জেলখানায় প্রায় তিন হাজার মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শাস্তিভোগ করছেন কিন্তু তাতে তো মাদকাসক্ত কমছে না। সব সময় আইন প্রয়োগের মাধ্যমেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমাদের নিজেদেরকেই নিজ নিজ চরিত্র সংশোধন করতে হবে। তিনি নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজের জীবনে নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষা প্রদানের আহ্বান জানান।
সভাপতি মহোদয় গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন একটি পরিবারে পুত্রসন্তানের বিয়ের পরে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে পরিবারের নারীদের উপর যেন এর দায় না বর্তায় সেজন্য নারীদের সচেতনতা আবশ্যক। নারীর শিক্ষা ও স্বাবলম্বী হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইপসার সহকারী পরিচালক জনাব ফারহানা ইদ্রিস।