
মোঃ বাবুল ময়মনসিংহ জেলা ব্যুরো প্রধান
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফী সাধক, বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের মহামান্য সাজ্জাদানিশীন এবং হযরত মাওলানা খাজা শাহ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর সুযোগ্য তৃতীয় সাহেবজাদা হযরত খাজা শাহ মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন নূহ মিয়া (রহ.)-এর জানাজা নামাজ ও দাফন অনুষ্ঠিত হয়েছে গভীর শোক ও হৃদয়বিদারক পরিবেশে।
আজ ২৬ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, বুধবার (১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ), বাদ জোহর সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ প্রাঙ্গণ ভরে যায় লাখো আশেকান, মুরিদান ও মুহিব্বিনের অশ্রুতে। জানাজার ইমামতি করেন টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া দরবার শরীফের পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুল মালেক আল মুজাদ্দেদী। আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে অবিরাম কান্নায়, প্রিয় পীরকে শেষ বিদায় জানাতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের মানুষ।
জানাজার পর তাঁকে দাফন করা হয় তাঁর পিতা, উপমহাদেশের অবিসংবাদিত ইসলাম প্রচারক, বরেণ্য সুফী সাধক হযরত খাজা শাহ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর মাজার শরীফ কমপ্লেক্সে। উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলেমা, খাজা পরিবারের সদস্যবৃন্দ, খাদেমবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন দরবারের প্রতিনিধি।
বেদনাবিধুর এই বিদায়ের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন— ময়মনসিংহ শম্ভুগঞ্জ লালকুঠি পাক দরবার শরীফের গদি নিশি আল্লামা শাহ সূফি মাওলানা খাজা সুজাউদ্দৌলা সৌজা হুজুর পীর কেবলাজান, এবং আল্লামা শাহ সুফি মাওলানা খাজা আলাউল হক অলি হুজুর পীর কেবলাজান।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন শম্ভুগঞ্জে মাওলানা খাজা সাইফুদ্দিন হুজুর পাকের নানা বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার জুনায়েদ মামা, যিনি প্রিয় পীরের ইন্তেকালে গভীর শোক ও ব্যথা প্রকাশ করেন।
গতকাল ২৫ নভেম্বর ২০২৫ খ্রি. (১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ), রাত ১১:৪০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে হযরত খাজা শাহ মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন নূহ মিয়া (রহ.) ইন্তেকাল করেন—ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ওফাতের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।
সুদীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল ও এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের সাজ্জাদানিশীন হিসেবে তিনি ছিলেন বাংলা–ভারতের হাজারো খানকা ও দরবারের আশার বাতিঘর। প্রজ্ঞা, সাহস ও অনুপম হেকমতের সাথে তিনি ছড়িয়ে গেছেন সত্য তরিকার আলো, মানবতার দীক্ষা এবং রাসূল প্রেমের অমিয় বাণী।
তাঁর ইন্তেকালে লক্ষ লক্ষ আশেকান-জাকেরান আজ অভিভাবকহারা। বিভিন্ন দরবার-খানকাহ, ধর্মীয় অঙ্গন ও সামাজিক সংগঠন শোকবার্তায় প্রকম্পিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক রীতি অনুযায়ী, জানাজার দিনেই সর্বসম্মতিক্রমে হযরত খাজা মুহাম্মদ গোলাম মেহেদী (মা:জি:আ) বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল, এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের চতুর্থ সাজ্জাদানিশীন হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, যা উপস্থিত আশেকান-মুরিদানের মাঝে সাময়িক স্বস্তির বাতাস বয়ে আনে।
এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে আজ ছিল এক দ্বৈত অনুভূতির দিন— একদিকে শতাব্দীর এক মহাসমুদ্রসম সুফী সাধকের ইন্তেকালে শোকের কালো মেঘ, অন্যদিকে তাঁর রেখে যাওয়া তরিকার পতাকাধারীর আগমনে পরম্পরার পবিত্র ধারাবাহিকতা।