খোরশেদ আলম সাগর,গঙ্গাচড়া(রংপুর)প্রতিনিধি: উজানে ভারি বৃষ্টিরও পাহাড়ি ঢলের ফলে গজলডোবা ব্যারেজ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদী তীরবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে চর মাদ্রাইন চরশংকরদহ, পশ্চিম ইচলী, ইচলী বাগেরহাট, কোলকোন্দের বিনবিনা, মটুকপুর ও নোহালীর মিনার বাজার, বাগডহরা, আনন্দ বাজার, গজঘণ্টার চর ছালাপাক,গাইছিয়া বাজার এবং মর্ণেয়ার ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া চর, নিলার পাড়া, তালপট্টিসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। গবাদি পশু ও গো খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির স্তর ছিল ৫২.২২ মিটার,যেখানে বিপদসীমা ৫২.১৫ মিটার। অথচ কয়েক ঘণ্টা আগেও পানি ছিল বিপদসীমার নিচে। নোহালী ইউনিয়নের চরমিনার বাজার এলাকার রশিদুল ইসলাম বলেন,এবছর এবার বড় বন্যা না হলে ঘন ঘন বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতি বছরই এমন হয়, মিনার বাজার এলাকায় অনেক বাড়ি ঘর পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তা ঘাট বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।গবাদি পশু নিয়ে পরেছেন বিপদে। আনন্দ বাজার, শখ বাজার এলাকাতে প্রায় বাড়ি ডুবে গেছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার জামাল মিয়া বলেন, রাতে পানি নদীর পানি ছিল না। সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। দুপুরের মধ্যেই ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গরু বাছুর নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি। সব জায়গা ডুবে গেছে কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী গ্রামের মনিষ কুমার জানায়,বর্ষা কাল এলে চরের মানুষ খুব সমস্যায় পরে। এবার ভয়াবহ বন্যা এখনো না হলেও ঘনঘন বন্যায় নিচু এলাকার ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।জানিনা পরে কি হবে। মর্ণেয়া ইউনিয়নের আনছারটারী এলাকার আলেফ উদ্দীন বলেন,তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে গেছে বসত বাড়ি,পশু খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।ফলে গরু, ছাগল নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি । অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। রিকশাচালক রবিউল ইসলাম বলেন,রাস্তায় পানি, ঘরেও পানি। রিকশা চালাতে পারছি না, আয়ও বন্ধ। সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।শুধু বর্ষায় বন্যা নয়, শীত মৌসুমে তিস্তায় দেখা দেয় চরম খরা। মর্ণেয়া ইউপি সদস্য মজমূল হক (ভেবোল) বলেন, বন্যা হলেই মর্ণেয়ার ভাঙ্গাগড়া চর, তালপট্টি নরসিং, নিলারপাড়া এলাকার মানুষগুলো খুব কষ্টে থাকে। আজকের বন্যায় প্রায় দুই'শ বাড়িতে পানি উঠেছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন,তিস্তা এখন আর আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ হয়ে গেছে। ভারত যখন খুশি পানি ছেড়ে দেয়, আবার যখন খুশি আটকে রাখে।তিনি আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। সাবেক শিক্ষক ও স্থানীয় সচেতন নাগরিক আব্দুল মালেক বলেন, সারা জীবন কষ্ট করে চরে বসবাস করলাম। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণায় আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, আমরা পরিস্থিতি প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করছি।দুপুর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। অবস্থা সাপেক্ষে বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।