খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের তিন দফা ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় গলাচিপা উপজেলা পরিষদ সম্প্রসারণ ভবনের সামনে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষক-কর্মচারী অংশগ্রহণে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
তাদের তিন দফা দাবি হলো- ১. মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাতা বৃদ্ধি ২️. প্রতি মাসে ১ হাজার ৫ শত টাকা চিকিৎসা ভাতা ৩️. ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা।
সমাবেশে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, বছরের পর বছর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হয়েও তারা ন্যূনতম অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষকরা বলেন, তাদের বেতন-ভাতা এতটাই অপ্রতুল যে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে তা দিয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় একজন শিক্ষককে মাস শেষে পরিবার চালাতে গিয়ে নানাভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শহরে একটি ছোট বাসা ভাড়া নিতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লাগে। অথচ অধিকাংশ শিক্ষকের মাসিক আয় দিয়ে সেই ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ভাংগা ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছেন। চিকিৎসা ভাতা এতটাই সামান্য যে তা দিয়ে কোনো প্রকার চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।
একইভাবে উৎসব ভাতাও নগন্য, যা বর্তমান মূল্যস্ফীতির বাজারে তাদের জীবনে সামান্য স্বস্তিও আনতে পারে না।
তারা আরও বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তারা সমাজে সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরি করেন—ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সবাই তাদের হাতে গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই শিক্ষকরাই আজ অর্থনৈতিক অনটনে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেক শিক্ষক নিজ সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিতে পারছেন না, যা সমাজের জন্য এক ধরনের লজ্জা।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নানা ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পেলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একই কাজ করেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একই বই পড়ানো, একই সময় ক্লাস নেওয়া—সবকিছু এক হলেও বেতন কাঠামোয় পার্থক্য অস্বাভাবিকভাবে বেশি। এই বৈষম্য শিক্ষক সমাজকে হতাশ করছে এবং শিক্ষার মানও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ ও একটি করে বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়েছে। অথচ একই মান ও যোগ্যতার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে শিক্ষক সমাজের মধ্যে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি অপরাধ করেছি? একই বই পড়াই, একই পরিশ্রম করি, তাহলে আমাদের এই বৈষম্য কেন?”
শিক্ষকরা দাবি করেন, তারা আর কোনো রাজনৈতিক সুবিধার আশায় নয়—বরং ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন। তারা জানান, গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
গলাচিপার সচেতন নাগরিক সমাজ শিক্ষকদের এই আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যে অপ্রতুল বেতনে সংসার চালান, তা একেবারেই অমানবিক। শিক্ষক সমাজ জাতির বিবেক, অথচ তারাই আজ অবহেলিত। সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া।
সমাবেশ শেষে শত শত শিক্ষক-কর্মচারী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা দাবি জানান, যতদিন তাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন আন্দোলন চলবে। তারা বলেন, এই আন্দোলন বেঁচে থাকার আন্দোলন, সম্মানের আন্দোলন।
গলাচিপা উপজেলা জুড়ে শিক্ষকদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ না এলে এই আন্দোলন আরও ভয়ংকর রূপ ধারন করবে।