
খন্দকার জলিল, জেলা ব্যুরো প্রধান, পটুয়াখালী:-
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে ওষুধ বিতরণ, রোগীদের খাবার সরবরাহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ও সামগ্রিক সেবা কার্যক্রমে একাধিক অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) পটুয়াখালী দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল লতিফ হাওলাদারের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপসহকারী পরিচালক খালিদ হোসাইন এবং কনস্টেবল মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ।
অভিযান চলাকালে দুদক কর্মকর্তারা হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, সরবরাহকৃত খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং হাসপাতালের স্টোরে থাকার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে না। বরং রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে বলা হচ্ছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক দল হাসপাতালের ওষুধ স্টোর ও সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার যাচাই করে। এ সময় দেখা যায়, কাগজে-কলমে ওষুধের মজুদ ও বিতরণের তথ্য থাকলেও বাস্তবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রোগীদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না।
এছাড়াও রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবারের মান ও পরিমাণে ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। কর্মচারীদের হাজিরা খাতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর রয়েছে। এমনকি কোনো ধরনের ছুটির আবেদন ছাড়াই টানা ছুটিতে থাকার তথ্যও উঠে আসে। একই সঙ্গে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার চিত্রও স্পষ্ট হয়।
অভিযান শেষে উপসহকারী পরিচালক খালিদ হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, ওষুধ বিতরণ, খাবার ব্যবস্থাপনা ও জনবল উপস্থিতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, স্টোরে সংরক্ষিত ওষুধের মজুদ ও রেজিস্টারের তথ্যের সঙ্গে বাস্তব অবস্থার মিল নেই। প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবারের ক্ষেত্রেও নিয়ম লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি পিস করা মাছের ওজন ৬২ গ্রাম হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে পাওয়া গেছে মাত্র ৩৪ গ্রাম।
অভিযানে আরও জানা যায়, হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক শিলা রাণী কোনো ধরনের ছুটির আবেদন ছাড়াই টানা ১০ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন এবং নিয়মিতভাবে দুপুরের দিকে অফিসে উপস্থিত হতেন। এ বিষয়ে তদারকিকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল লতিফ হাওলাদার বলেন, হাসপাতালে কার্যকর নজরদারির অভাব রয়েছে এবং দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারণে দায়িত্বে শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাফিলতির কারণেই হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মেজবাহ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে এসে কথা বলতে বলেন। ফোনেই বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি জরুরি সভার কথা উল্লেখ করে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
দুদকের এই অভিযানে হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে ওষুধ সংকট, নিম্নমানের খাবার, সেবায় অবহেলা ও নোংরা পরিবেশের অভিযোগ থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিল না। দুদকের অভিযানকে তারা ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।