খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক সংকট ও জরাজীর্ণ ভবনের দ্রুত সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে উপজেলার সাধারণ জনগণ। এতে বিভিন্ন পেশার মানুষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সচেতন নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন—গলাচিপা পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. জিয়াউর রহমান জিয়া, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আরিফ বিল্লাহ, মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান, গলাচিপা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুন্না, রেড ক্রিসেন্টের উপজেলা দলপ্রধান মো. ফিরোজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহেদ হোসেন ও শাহেদ আহমেদ জয়সহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, “গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বছরের পর বছর ধরে চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে। চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি, ওষুধের সংকট, ভবনের বেহাল দশা এবং অনেকের অমানবিক আচরণের কারণে মানুষ এখন হাসপাতালে যেতে ভয় পায়। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
তারা আরও বলেন, “একটি উপজেলার প্রধান সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র যদি কার্যত অচল হয়ে পড়ে, তবে তা পুরো এলাকার মানুষের জন্য মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে। তাই হাসপাতালটি দ্রুত সংস্কার করে যথাযথ জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
মানববন্ধনে উপস্থিত গলাচিপা সরকারী কলেজের ছাত্রী নাইমা হক মেঘলা ও ছাত্রনেতা তরিকুল ইসলাম মুন্না হাসপাতাল সংস্কার ও সেবার মানোন্নয়নে ৯ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
স্বল্পমেয়াদী কর্মসূচী:
১. ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের বর্জ্য পরিষ্কার।
২. ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টয়লেট ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
৩. ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীদের খাদ্যতালিকা ও সরকারি বরাদ্দের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ।
দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী:
১. ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শূন্য পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ।
২. পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু।
৩. আধুনিক সিজার ও ল্যাব-এক্সরে ইউনিট স্থাপন।
৪. অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল টোকেন ব্যবস্থা চালু।
৫. ডিউটি টাইম মনিটরিং ও অন্তত দুটি সচল অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিতকরণ।
৬. জরুরি ও বহিঃবিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “হাসপাতালে জনবল ঘাটতি ও অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্থানীয় পর্যায়ে যা যা সম্ভব, দ্রুত তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট লিখিত স্মারকলিপি জমা দেন।